Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ঢাকায় ক্রিকেট উৎসব

মামুনুর রহমান: ত্রিদেশীয় ক্রিকেট উৎসব শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ মিলে ৩ দেশের ক্রিকেট লড়াই ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। এবারের উৎসবটি নানা কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতদিন যিনি ছিলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ সেই হাথুরে শিং স্বয়ং এবার শ্রীলঙ্কা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকায় এনেছেন। বাংলাদেশের এক সময়ের হেড কোচ হাথুরে এখন শ্রীলঙ্কা দলের হেড কোচ। এতদিন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য যিনি উম্মুখ থাকতেন তিনিই এখন একই খেলায় শ্রীলঙ্কা দলের সাফল্যের জন্য উম্মুখ হবেন। একেই বলে পেশাদারিত্ব। তবে বাংলাদেশ দলের জন্য পরিস্থিতিটা একটু যেন বিব্রতকর। হাথুরে দল থেকে চলে যাবার পর পরই বাংলাদেশ প্রথম যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মুখোমুখি হলো তাতে অংশ নেয়া একটি দেশের হেড কোচ স্বয়ং বাংলাদেশ সাবেক হেড কোচ। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কার কি যোগ্যতা সে ব্যাপারে হাথুরের ভালোই জানার কথা। বোধকরি সেভাবেই তিনি তার নতুন সৈনিকদের তৈরি করে এনেছেন। সঙ্গে করে এনেছেন একটি তরুপের তাস। তার নাম মাদুশঙ্কা। ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগেই এই তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে। ওর পুরোনাম শেহান মাদুশঙ্কা। প্রথম শ্রেণি এবং লিস্ট-এ ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৩টি করে। সেখানে অবশ্য আহামরি কোনো পারফরমেন্স নাই। ২২ বছর বয়সী এ পেশারকে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কান দলে অতিরিক্ত একজন খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড নির্বাচক প্যানেলকে অনুরোধ করেছিল। সেই অনুযায়ী ‘বিশেষ কিছু’ বিবেচনা করেই মাদুশঙ্কাকে দলে নেয়া হয়েছে।

শ্রীলঙ্কান কোচ হাথুরে সিংহে দলের নতুন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী। তিনি বলেছেন, মাদুশঙ্কা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। দলে তাকে দীর্ঘদিনের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্ভাবনাময় কোনো তরুণকে খুঁজে পেলে তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার রেওয়াজ লঙ্কান ক্রিকেটে কিন্তু নতুন কিছু নয়। তাঁরা এর ভালো-মন্দ দুটোই দেখেছে। পুষ্পকুমারাকে মনে আছে?

প্রায় ২০ বছর আগের কথা। সিদ্ধার্থ ওয়েত্তিমুনি তখন লঙ্কান নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যান। বলা নেই, কওয়া নেই, হুট করে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে পুষ্পকুমারাকে তুলে এনেছিলেন জাতীয় দলে! মাদুশঙ্কার ক্ষেত্রে যেভাবে যা ঘটেছে, ঠিক একইভাবেবাইরের দেশ সফরের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মুত্তিয়া মুরালিধরন, অরবিন্দ ডি সিলভাদের সঙ্গে ছিলেন পুষ্পকুমারা। সেবার কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি, কিন্তু এমন প্রতিশ্রæতির প্রতি আস্থা তো দেখিয়েছেন নির্বাচকেরা। পরে মাত্র ৫৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে সে আস্থার অবশ্য প্রতিদান দিতে পারেননি পুষ্পকুমারা।

পুষ্পকুমারা তখন যেভাবে নজর কেড়েছিলেন, মাদুশঙ্কাও ঠিক একইভাবে কোচ-নির্বাচকদের চোখে পড়েছেন। এর আগে শারজায় টি-টেন টুর্নামেন্টে মাদুশঙ্কার বোলিংয়ে চমকে যান হাথুরুসিংহে। লঙ্কান এ কোচের চাপাচাপিতেই ত্রিদেশীয় সিরিজের জন্য ২৩ জনের প্রাথমিক দলে ডাক পান মাদুশঙ্কা। এরপর জায়গা পেলেন চূড়ান্ত স্কোয়াডেও। ত্রিদেশীয় সিরিজে কিন্তু তাঁর অভিষেকের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্তত মাদুশঙ্কাকে নিয়ে শ্রীলঙ্কান কোচের যে পরিকল্পনা, তাতে সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

লঙ্কান সংবাদমাধ্যম ‘আইল্যান্ড’কে দেয়া হাথুরুসিংহের ভাষ্য, ‘পেস আসলে ঈশ্বরপ্রদত্ত উপহার। এটা কোচিং দিয়ে গড়তে পারবেন না। আমরা শুধু টেকনিক্যাল দিকগুলো ধরিয়ে দিতে পারি। সামনেই বিশ্বকাপ, যা অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডে। সেখানে আমাদের কিছু ভালো পেসার দরকার। তাই আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্বকাপে যেসব খেলোয়াড় ভাবনায় আছেন, তাঁদের প্রস্তুতির জন্য ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে হবে।’

মাদুশঙ্কাকে নিয়ে লঙ্কান সংবাদমাধ্যমও পড়ে আছে। এরই মধ্যে তাঁকে ভাবা হচ্ছে পরবর্তী মোস্তাফিজুর রহমান কিংবা কাগিসো রাবাদা হিসেবে। প্রত্যাশার এই চাপ মোস্তাফিজকে কতটুকু ‘উপকৃত’ করেছে, তা সবাই এখন দেখছে। লঙ্কান ক্রিকেটও কি ঠিক একই ভুল করবে?