Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ সেরা অভিনেতা চঞ্চল, সেরা অভিনেত্রী তিশা এবং কুসুম শিকদার

আনন্দ সংবাদ। ২০০৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষনা করা হয়েছে। ২৬টি শাখায় শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আয়নাবাজি খ্যাত তারকা চঞ্চল চৌধুরী এবং শ্রেষ্ঠ অভিনত্রেীর পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে অস্থিত্ব ছবিতে অভিনয়ের জন্য কুসুম শিকদার। ২৬টি পুরস্কারের মধ্যে ৯টিই ইসপ্রেস প্রযোজিত ৪টি ছবির অভিনয় শিল্পীরা পেয়েছেন। এছাড়াও এবার গুণী অভিনেত্রী ফরিদা আকতার ববিতা ও আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে আজীবন সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষনা করা হয়েছে। পুরস্কার প্রাপ্তরা অন্যান্যরা হলেন, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্যÑ ফরিদুর রেজা সাগর (প্রযোজক অজ্ঞাতনামা) শ্রেষ্ঠ স্বল্পদের্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য এস এম কামরুল আহসান (প্রযোজক ঘ্রান) শ্রেষ্ঠ প্রামান্য চলচ্চিত্রÑ জন্মসাথী (প্রযোজক একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর) শ্রেষ্ঠ পরিচালকÑ অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি) শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেতাÑ যৌথভাবে আলীরাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে) শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেত্রীÑতানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ) শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা-শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা) শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী আনুম রহমান খান সাঝবাতি (শঙ্খচিল) শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক- ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে) শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার- তৌকির আহমেদ (অজ্ঞাতনামা) শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা- রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন) শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি) শ্রেষ্ঠ সম্পাদক- ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি) এবং শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক- উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)।

১২ বছরে ১৭০টি পেয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম

Impress-Filmএবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ এর ২৬টি পুরস্কারের মধ্যে ইমপ্রেস প্রযোজিত ৪টি চলচ্চিত্র পেয়েছে ৯টি পুরস্কার। আনন্দের খবরÑ ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইমপ্রেস প্রযোজিত বিভিন্ন চলচ্চিত্র ১৭০টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। দেশে তো বটেই এই উপমহাদেশে কোনো চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার কৃতিত্ব ইমপ্রেসই দেখিয়েছে। ২০১৬ সালের ২৬টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে ইমপ্রেস প্রযোজিত ৪টি চলচ্চিত্র ৯টি পুরস্কার পেয়েছে। যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের (অজ্ঞাতনামা) জন্য ফরিদুর রেজা সাগর, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (শঙ্খচিল) কুসুম শিকদার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রভিনেত্রী (কৃষ্ণপক্ষ) তানিয়া আহমেদ, শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা (অজ্ঞঅতনামা) শহীদুজ্জামান সেলিম, শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী (শঙ্খছিল) আনুম রহমান খান সাঝবাতি, শ্রেষ্ঠ গায়ক (দর্পণ বিসর্জন) ওয়াকিল আহমেদ, শ্রেষ্ঠ গায়িকা (কৃষ্ণপক্ষ) মেহের আফরোজ শাওন, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার (অজ্ঞাতনামা) তৌকির আহমেদ এবং শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক (শঙ্খচিল) উত্তম গুহ।

মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ে!

Bobitaবিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া কি খুবই সহজ? তাও আবার নায়িকার চরিত্রে? বাস্তবে খুবই কঠিন। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রী ববিতা সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। ছবির নামÑ অশনি সংকেত। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ এবং তার প্রেক্ষিতে তখনকার গ্রাম বাংলার আর্থ সামাজিক পটপরিবর্তন ছিল এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। বহুল আলোচিত এই চলচ্চিত্রের অনঙ্গ বৌ নামক কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। সঙ্গে ছিলেন বাংলা সিনেমার আরেক কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অশনি সংকেতে ববিতার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। বলেছিলেন, অভিনয়ের প্রতি ববিতার আগ্রহ ও নিষ্ঠা দেখে আমি মুগ্ধ। অভিনয় জগতে একদিন অনেক নাম করবে ববিতা… মিষ্টি হাসির মিষ্টি মেয়ে ববিতা সত্যি সত্যি সে কথা প্রমাণ করেছেন।

একথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না ববিতা আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে কতটা শ্রদ্ধার আসনে আধষ্ঠিত। ববিতা আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী। ববিতার চলচ্চিত্রে আসার পেছনে বড় বোন গুণী অভিনেত্রী সুচন্দার অনেক অবাদন আছে। সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার অভিনয় জীবন শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো সংসার ছবিতে রাজ্জাক ও সূচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ববিতা। তখন অবশ্য তার নাম ছিল সুবর্না। ‘কলম’ নামে একটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন ববিতা। জহির রায়হান পরিচালিত ‘জ্বলতে সুরুজ কি নীচে’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সবুর্না হয়ে যান ববিতা। ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ নামের একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপর তো শুধুই সাফল্যের ইতিহাস। বাদী থেকে বেগম, লাঠিয়াল, সংসার সীমান্তে, সূর্যগ্রহণ, নয়নমনি, গোলাপি এখন ট্রেনে, কিযে করি, এক মুঠো ভাত, অনন্ত প্রেম, নিশান, পদ্মা মেঘনা যমুনা, শ্বশুর বাড়ি, মহামিলন, পোকামাকড়ের, ঘরবসতি, দীপু নাম্বার টু, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, এজীবন তোমার আমার, এখনো অনেক রাত, ম্যাডাম ফুলি, হাছন রাজা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, চার সতীনের ঘর, সবাই তো ভালোবাসা চায়,  অবুঝ বউ, ওরা আমাকে ভালোবাসতে দিল নাসহ কয়েকশ ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা। অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। চলচ্চিত্রে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রকর্তৃক তিনি আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন। আনন্দ আলো পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

সবার প্রিয় মিয়া ভাই!

Farukআকবর হোসেন পাঠান বললে অনেকেই হয়তো তাকে চিনবেন না। কিন্তু নায়ক ফারুক বললেই দেশের প্রায় সব মানুষই চিনবেন। কেউ কেউ তাকে আদর করে মিয়া ভাইও বলেন। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা ফারুক ২০১৬ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান কর্মসূচির আওতায় সরকার কর্তৃক আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ফারুকের অভিনয় জীবন শুরু হয়। কবরী ছিলেন এই ছবির নায়িকা। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ১৯৭৫ সালে নাবায়ন ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ নামের দুটি চলচ্চিত্রে পার্শ¦চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক আলৈাচনায় আসেন। এরপর ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভ‚মিতে নির্মিত বহুল আলোচিত ছবি ‘সুজন সখি’ ও ‘লাঠিয়াল’ এ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তুমুল অ ালোচনার জন্ম দেন। তারপর তো ফারুকের অভিনয় জীবনে শুধুই সাফল্য আসতে থাকে। সুর্যগ্রহণ, মাটির মায়া, নয়ন মনি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, নাগর দোলা, দিন যায় কথা থাকে, কথা দিলাম, মাটির পুতুল, সাহেব, ছোটমা, এতিম, ঘরজামাই, সখি তুমি কার, মিয়া ভাইসহ অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন ফারুক। অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় ফারুক জন্ম গ্রহণ করেন। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। আকবর হোসেন পাঠান ওরফে আমাদের চলচ্চিত্রের অতি আপনজন ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি লড়াই করেছেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা পেতে যাাচ্ছেন তিনি। আনন্দ আলো পরিবারের পক্ষ থেকে প্রিয় অভিনেতা ফারুককে অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।