Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গৌতম ঘোষের নতুন ছবি শঙ্খচিল এবং সাঝবাতির কথা

শুভ সংবাদ। আনত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের নতুন সিনেমা শঙ্খচিল আসছে বাংলা নববর্ষে। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ ছবিটির বাংলাদেশ অংশের মূল দায়িত্ব পালন করছেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও আশীর্বাদ চলচ্চিত্র। সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। সম্প্রতি চ্যানেল আই ভবনে ছবিটির মুক্তি উপলক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবির পরিচালক গৌতম ঘোষ, চ্যানেল আই ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের কর্ণধার হাবিবুর রহমান খান, ছবির অভিনেতা নাট্যজন মামুনুর রশীদ, অভিনেত্রী কুসুম সিকদার, সাঝবাতি, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরাসহ অন্যান্যরা সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। উল্লেখ্য, দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শঙ্খচিল গৌতম ঘোষের ১৪তম কাহিনী চিত্র। শঙ্খচিল- এর চিত্রায়ন হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমানত্ম সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। শঙ্খচিল-এর কাহিনী প্রসঙ্গে গৌতম ঘোষ বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পরবর্তী সময়ের সীমানত্মবর্তী এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প এটি। তবে এটি দেশভাগের গল্প নয়। দেশভাগের স্মৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে মানবিক গল্প।

চরিত্রটির জন্যই সাঝবাতির জন্ম হয়েছে!

01_2সাঝবাতি হয়তো বা এখন কথাটার সঠিক মর্ম বুঝতে পারবে না। কিন্তু বড় হয়ে ঠিকই বুঝতে পারবে ছোটবেলায় সত্যি সত্যি আলাউদ্দিনের আশ্চর্য এক প্রদীপ পেয়েছিল সে। হ্যাঁ, ব্যাপারটা আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতোই। আলাউদ্দিনের সেই প্রদীপ, ঘষে যা চাইবেন তাই পেয়ে যাবেন। সাঝবাতির হাতেও সে রকম এক আশ্চর্য প্রদীপ আছে। যে প্রদীপ তাকে আশীর্বাদ করেছে। এই আশ্চর্য প্রদীপের নাম বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। তাকে আশ্চর্য প্রদীপ কেন বলছি? হ্যাঁ এর যুক্তিযুক্ত অনেক কারণ আছে। আশ্চর্য প্রদীপ ঘষলে কি হয়? ইচ্ছে পূরণ হয়। গৌতম ঘোষও তাই। আমাদের চলচ্চিত্রের আশ্চর্য প্রদীপ। ঘষা দিয়ে বলবেন, একটা ভালো সিনেমা চাই। তৎক্ষণাৎ হাজির হবে ভালো সিনেমা। শুধুমাত্র বাংলাদেশে নির্মাণ করা তার ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ আর ‘মনের মানুষ’ দেখলেই সকলে স্থির হবেন বিশ্বখ্যাত এই চিত্র পরিচালকের হাতে সত্যি সত্যি আশ্চর্য প্রদীপ আছে। তা নাহলে জীবন এতো সুন্দর ও বাসত্মব হয়ে কিভাবে উঠে আসে চলচ্চিত্রে?

চলচ্চিত্রের সেই যাদুকর যখন কাউকে নিয়ে কোনো মনত্মব্য করেন তখন তা হয়ে ওঠে অন্য অর্থে আরেক আশ্চর্য প্রদীপ। হ্যাঁ সাঝবাতিই এক আশ্চর্য প্রদীপ। গৌতম ঘোষের নতুন সিনেমা শঙ্খচিল-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে এই মেধাবী কিশোরী। সাঝবাতি সম্পর্কে গৌতম ঘোষের মনত্মব্য- ও আসলে একটা জিনিয়াস। আমার শঙ্খচিলে ও যে চরিত্রে অভিনয় করেছে আমি মনে করি ওই চরিত্রের জন্য ওর জন্ম হয়েছে। সাঝবাতি অভিনয় জগতে থাকলে একদিন দেশ বিদেশে অনেক নাম করবে।

কে বলেছেন এককথা? বিশ্বখ্যাত চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ। কার সম্পর্কে বলেছেন? তার নতুন ছবির এক কিশোরী অভিনেত্রী সাঝবাতি সম্পর্কে বলেছেন একথা। সাঝবাতির জন্য এটাই তো আলাউদ্দিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ। ঘষলেই গৌতম ঘোষের আশীর্বাদ বাণী শোনা যাবে- ও আসলে একটা জিনিয়াস…

এর চেয়ে তো আর বেশি কিছু লাগে না। ঐ একটি বাক্যই যথেষ্ট। সাঝবাতির জীবনে এটি আশীর্বাদ হয়েই থাকবে। তার ইঙ্গিতও পাওয়া গেল সাঝবাতির কথায়। গৌতম ঘোষকে সে দাদু বলে ডাকে। আদুরে গলায় বলল, গৌতম দাদু আমাকে অনেক আদর করেন। তাই তার ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে কখনো ভয় পাইনি। ব্যাপারটা ছিল অনেক ফ্রেন্ডলি। জানি না ছবিতে কতটুকু ভালো অভিনয় করতে পেরেছি। তবে কাজটি করতে পেরে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।

এবার বোধকরি সাঝবাতির পরিচয়টা তুলে ধরা দরকার। কেনই বা গৌতম ঘোষ তার দাদু হলেন? আনন্দের সংবাদ হচ্ছে সাঝবাতি দেশবরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান খানের নাতনী। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে। লেখাপড়ায় খুবই মেধাবী।

হাবিবুর রহমান খান আর গৌতম ঘোষ এপার ওপারের দুই কৃতি পুরুষ পরস্পরের ভালো বন্ধু। দু’জন দু’জনকে ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকেন।

পাঠক, এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন গৌতম ঘোষকে সাঝবাতি কেন দাদু বলে ডাকে? সম্পর্কের মজার রহস্যটা না হয় উন্মোচিত হলো। কিন্তু সাঝবাতি গৌতম ঘোষের শঙ্খচীলে অভিনয়ের সুযোগ পেল কীভাবে? হাবিবুর রহমান খানের নাতনী বলেই কী এই সুযোগ মিলেছে? আসুন গল্পটা শুনি হাবিবুর রহমান খানের জবানীতে।

একদিন হঠাৎ গৌতমের ফোন। মিয়া ভাই নতুন ছবির আইডিয়া পাইছি। গৌতমের কথা শুনে আমিতো খুশি। বর্ডারের কাহিনী নিয়ে ও ছবি করতে চায় জেনে আরো ভালো লাগল। ছবির কাহিনী শোনাল। সেখানে একটি মেয়ে শিশুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গৌতম আমাকে চরিত্র সম্পর্কে একটা আইডিয়া দিয়ে জানতে চাইল- মিয়া ভাই বলতো এই চরিত্রটায় কাকে নেওয়া যায়?

গৌতমের মুখে চরিত্রটির বর্ণনা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে আমার কেন যেন মনে হলো- আরে অভিনেত্রী তো আমার ঘরেই আছে। আমার আদরের নাতনী সাঝবাতি। গৌতমকে সাঝবাতির কথা বললাম। ও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল। বলল, মিয়া ভাই তোমার চয়েজ ঠিক আছে।

কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি যেন একটু সংকুচিত হতে থাকলাম। নিজের ছবিতে নাতনী অভিনয় করবে? লোকে নানা কথা ভাবতে পারে? কাজটা কী ঠিক হবে?

একদিন গৌতম ঢাকায় এলো। সাঝবাতির ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নিল। স্ক্রীন টেস্ট করলো। গৌতম খুশি। বলল, মিয়া ভাই সাঝবাতিই পারফেক্ট। আমার নাতনী বলে বলছি না। শঙ্খচিলে সাঝবাতি খুবই ভালো করেছে। আমি ওর অভিনয়ে মুগ্ধ।

যার জন্য এতো প্রশংসা সেই সাঝবাতির প্রতিক্রিয়া কী? চ্যানেল আইতে শঙ্খচিল এর সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিল সাঝবাতি। মাইকে সামনে দাঁড়িয়ে আদুরে গলায় শোনাল হৃদয় ছোয়া কিছু কথা।

আমি বাসায় কয়েকদিন ধরে বুঝতে পারছিলাম আমাকে নিয়ে কিছু একটা ভাবা হচ্ছে। একসময় বুঝলাম আমকে গৌতম দাদুর ছবিতে অভিনয় করতে বলা হবে। মনে মনে চাচ্ছিলাম আমাকে যেন এই কাজ করতে না হয়। কারণ অভিনয় তো অনেক বড় ব্যাপার। আমি কী পারব? এক সময় গৌতম দাদু আমাদের বাসায় এলেন। আমার ইন্টারভিউ নিলেন। বললেন, আমাকে দিয়ে নাকি কাজটা হবে। তখন সাহস পেলাম। ব্যস কাজটা শুরু করলাম। কাজটা খুবই ফ্রেন্ডলি ছিল। আমি খুবই হ্যাপি!

সাঝবাতি নামটা বেশ সুন্দর। নাতনীর এই নামটি হাবিবুর রহমান নিজে রেখেছেন। একটি ছবির নাম ছিল ‘সাঝবাতি’র রূপকথার। সেখান থেকে নামটি তার খুব পছন্দ হয়। নাতনীর নাম রাখেন সাঝবাতি। তবে সাঝবাতির আরো একটি নাম আছে। নামটি হলো আননুম খান।