Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গুডলাক বাংলাদেশ!

রেজানুর রহমান

দেশটার প্রতি আমাদের কী যে মায়া। সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে খেলতে নামলেই বোঝা যায়। মাঠে খেলে ১১ জন আর মাঠের বাইরে দেশ-বিদেশে একসাথে প্রার্থনায় থাকে কোটি কোটি বাঙালি। সবার সমবেত প্রার্থনা- হে মাবুদ বাংলাদেশ দলকে জিতিয়ে দাও। কেন এই সমবেত প্রার্থনা? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সবাই জানি। ছোট্ট শিশুও বলে দিতে পারবে প্রার্থনাটা কিসের। প্রার্থনা দেশের জন্য। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতলে বাংলাদেশ জিতে। লাল সবুজের প্রিয় পতাকা জিতে যায়। সেজন্যই এই সমবেত প্রার্থনা।

সম্পর্কিত

ঢাকায় চলছে এশিয়া কাপ টি-টুয়েন্টি উৎসব। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, পাকিসত্মানের সাথে ইউনাইটেড আরব আমিরাত ক্রিকেট দল যোগ দিয়েছে এই উৎসবে। এশিয়ার ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু হয়েছে। একমাত্র আরব আমিরাত ছাড়া বাকি ৪টি দেশ অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও পাকিসত্মান শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে কারও চেয়ে কম নয়। ক্রিকেটের নতুন সংস্করণ টি-টুয়েন্টিতে অবশ্য কোন দলকেই এককভাবে শ্রেষ্ঠ বলা যায় না। কারণ গতকাল যে ছিল সেরা পরের দিনই তার অবনতি হতে পারে। বাংলাদেশকে টি-টুয়েন্টি ফর্মে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল ভাবা হয়। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেমন দুর্বার টি-টুয়েন্টিতে তেমন নয়। এমন ভাবনাই ছিল এশিয়া কাপ শুরুর আগে। কিন্তু গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শক্তিধর শ্রীলংকাকে হারানোর পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কে সবার ধারণা পাল্টে গেছে। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন স্থির করে বলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে আসলে কতদূর যাবে। তবে বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এখন প্রতিবন্ধকতা শুধুই পাকিসত্মান। এই ম্যাচটি জিতলেই বাংলাদেশ ফাইনালের টিকিট পেয়ে যাবে। ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দাঁড়াবে ক্রিকেটের শক্তিধর দেশ ভারত।

এইসব হিসাব-নিকাশ আপাতত থাক। আমরা মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট জিতে গেছে। তা নাহলে এতো মানুষের আবেগ আনন্দ আসে কোত্থেকে? টিভি পর্দায় যারা খেলা দেখেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন মাঠের গ্যালারীতে হাজার হাজার মানুষের সে কী উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। শুধুই প্রার্থনা- যেনো বাংলাদেশ জিতে যায়। বাংলাদেশ সামান্য এক রানের পুঁজি গড়লেও গ্যালারী থেকে তুমুল আনন্দধ্বনি বাজে- এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। আর মাঠের বাইরে? সারাদেশে? মাঠে, ঘাটে, পাড়া মহল্লায় আর বাসাবাড়িতে তখন অবস্থা দাঁড়ায় কী রকম?

দুটো চিত্র তুলে ধরি। একজন গৃহিণী টিভিতে বাংলাদেশের খেলা দেখছেন আর রান্না বান্নার প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি কাজ সেরে নিচ্ছেন। চুলায় মুরগির মাংস তুলে দিয়েছেন। কিন্তু চোখ তার টিভি পর্দায়। মুসত্মাফিজুর রহমান বল করছেন। গৃহিণী টিভি পর্দা থেকে তার চোখ সরাতে পারছেন না। মনের ভেতরে আকুতি- হে মাবুদ ছেলেটা যেনো এই উইকেটটা পায়।

রান্নাঘর থেকে মাংস পোড়ার গন্ধ আসছে। অর্থাৎ মুরগির মাংস পুড়ে যাচ্ছে। গৃহিণীর সেদিকে খেয়াল নেই। তার চোখ-কান শুধুই টিভি পর্দার দিকে। মুরগির মাংস পুড়ে যাচ্ছে… যাক। মুরগির মাংস আবার কেনা যাবে। কিন্তু মুসত্মাফিজুরের কীর্তি তো আর সরাসরি দেখা যাবে না।

মুসত্মাফিজুর উইকেট নিয়েছে। গৃহিণী তার কাজ ফেলে যাকেই পারে তাকেই ফোন দেয়- আপা খবর দেখছেন তো… আরে হ্যাঁ… আমাদের মুসত্মাফিজতো কিসিত্মমাত করেছে। হ্যাঁ…

অবিশ্বাস্য আনন্দময় ঘটনা। মুসত্মাফিজুর রহমান গৃহিণীর পরিচিত কেউ নন। অথচ তার সাফল্যে কী সেই উচ্ছ্বাস। কেন? সোজা উত্তর- দেশের জন্যই এই উচ্ছ্বাস। কারণ মাশরাফি, মুসত্মাফিজরা যখন মাঠের লড়াইয়ে জিতে তখন বাংলাদেশই জিতে। আর মুসত্মাফিজ, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, সৌম্য সরকার, সাব্বিররা তখন হয়ে যান সবার ঘরের ছেলে, আদুরে সনত্মান…

আরেকটি চিত্র তুলে ধরি। পাড়ার খোলা মাঠে বড় পর্দায় ক্রিকেট খেলা দেখার আয়োজন করেছে একদল তরুণ ক্রিকেটার। মাঠ ভর্তি মানুষ। ঘাসের ওপর বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন প্রতিপক্ষের উইকেট নেয় তখন সারা এলাকায় আনন্দধ্বনি ওঠে। খেলার রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। বাংলাদেশ জিতবে নাকি হেরে যাবে? এমনই টানটান অবস্থা। একসময় বাংলাদেশ জিতে গেল। তখন শুরু হয়ে গেল বিজয়ের আনন্দ উৎসব। যে যাকেই কাছে পাচ্ছে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছে। হঠাৎ দেখা গেল পরস্পরকে জড়িয়ে ধরা দু’জন রাজনৈতিক নেতার প্রতি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিজয়ে এলাকার বিবদমান দুই রাজনৈতিক দলের দু’জন নেতা অজানেত্ম পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করছিলো। সবাই যখন তাদের দিকে তাকাচ্ছে তখন দু’জনই আসল ঘটনা বুঝতে পারল। কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়লো না। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ করতেই থাকল।

প্রিয় পাঠক, এটাই হলো আমাদের ক্রিকেটের শক্তি। এশিয়া কাপ নিশ্চয়ই আরো ভালো করবে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের পরই ভারতে শুরু হচ্ছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। বিশ্ব ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াই।

আমাদের সমবেত প্রার্থনা ক্রিকেটের জয় হোক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। গুডলাক বাংলাদেশ।