Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমরা খুবই ভালো বন্ধু!

যিনি তার মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে কোটি মানুষের হৃদয়কে সুরের দোলায় মাতিয়ে রাখেন। তিনি জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ফাহমিদা নবী। ভীষন আড্ডাবাজ ও আমুদে একজন মানুষ। মিষ্টি হাসি এবং প্রাণবন্ত কথার জাদুতে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক গানের পাশাপাশি রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীতের চর্চা করেন। ফাহমিদা নবীর একমাত্র মেয়ের নাম আনমোল। মা-মেয়েকে আনন্দ আলো একদিন মুখোমুখি বসিয়ে ছিল। ব্যস জমে গেল মধুর আড্ডা। সেই প্রাণবন্ত আড্ডার চুম্বক অংশ থাকলো এই প্রতিবেদনে। লিখেছেন-মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: মা ফাহমিদা নবী এবং মেয়ে আনমোল পরস্পরের কাছে কে কেমন?
ফাহমিদা নবী: আমার সন্তানকে আমি স্বাধীনতা দিয়েই মানুষ করেছি। কোনো প্রেসার ওকে দেয়া হয় না। আনমোল আমার একমাত্র মেয়ে। ল’তে পড়ছে। ব্যারিষ্টার হতে চায়। আমি চাই ও যেন প্রথমে একজন ভালো মানুষ হয় এবং আমাদের সম্মানটা যেন ধরে রাখতে পারে। যে সম্মানটা আমরা দিনের পর দিন বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একজন বন্ধু যেমন আরেকজন বন্ধুকে বুঝে, ভালোবাসে ঠিক তেমনিই আমাদের মধ্যে সর্ম্পক। ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতাটা ওর মধ্যে আছে। আনমোল অনেক সরল-সহজ মেয়ে।
আনমোল: আমরা পরস্পর দুজন খুবই কাছের বন্ধু। সব কিছু শেয়ার করা যায় এ রকম একটা সর্ম্পক আছে আমাদের মধ্যে। ব্যক্তি হিসেবে আম্মু সচেতন মানুষ, ভালো মানুষ এবং সর্বোপরি অসাধারণ একজন মমতাময়ী মা। ঘর-সংসার এবং গান সব কিছু সমানভাবে দেখছেন। আম্মু আর আমি একই রকম জিনিস পছন্দ করি। আমরা দু’জন ঘর সাজানো থেকে শুরু করে সব কিছু এক সাথে করে থাকি।
আনন্দ আলো: মায়ের শাসন আর মেয়ের জ্বালাতন এ সম্পর্কে কার কী অভিমত?
ফাহমিদা নবী: আমি শাসন করবো কী? ওই আমাকে শাসন করে নিয়মিত। এটা এভাবে কর, ওটা ঐভাবে কর, এটা হচ্ছেনা…। ওর শাসনটাও আমি মেনে নেই। মেয়ের জ্বালাতন বলতে নেই। আল­াহর রহমতে আমার মেয়েটা খুবই লক্ষী।
আনমোল: আম্মু কখনই আমাকে বকাঝকা, মারধর করেনি। আম্মুর শাসনটা আমার কাছে মনে হয় একরকম উপদেশ। সব সময় বুঝায়। আমার ভুল হলে সেটা শুধরে দেয়। যেটা ভালো সেটাকে এপ্রিশিয়েট করে। একজন মানুষকে কী ভাবে বুঝাতে হয় সেটা আমি আম্মুর কাছ থেকে শিখেছি।
আনন্দ আলো: সঙ্গীতে বাবা-মায়ের প্রভাব কতটুকু?
ফাহমিদা নবী: সঙ্গীতে আমার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রভাব অনেক বেশি। ছোটবেলায় দেখতাম বাবা গান করতেন, রেওয়াজ করতেন। এ বিষয়টি আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাত। বাবা আমার গানের ব্যাপারে প্রচন্ড সিরিয়াস ছিলেন। তিনি চাইতেন আমি যেন শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা করি। ভালোবেসে যেন গান করি। বাবার হাত ধরেই আমার গান শেখা। আমার মা অসম্ভব ভালো গান করতেন। এখনো মা আমাকে গানের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আনন্দ আলো: মেয়ের ভালোমন্দ দিক নিয়ে কিছু বলুন?
IMG_5069ফাহমিদা নবী: মা-বাবার কাছে সব ছেলে-মেয়েই বাঁচ্চা থাকে। সব সময় ওদেরকে আমরা জ্ঞান-উপদেশ দিয়ে থাকি। আনমোলের ভালো দিক হচ্ছে ও খুবই ধৈর্যশীল একটি মেয়ে। ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতা ওর মধ্যে আছে। ও খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। ওর ছোট খাটো একটা জগত আছে। সে জগতে ও হ্যাপিনেস খুঁজে নেয়। বেশির ভাগ সময় মানুষকে খুশি করার চেষ্টায় থাকে। আনমোলের মন্দ দিক নেই বললেই চলে।
আনন্দ আলো: আনমোলের কাছে জানতে চাই মায়ের কোন দিকটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?
আনমোল: মা অনেক সত্যবাদী। কোনো কিছু না লুকিয়ে সরাসরি বলতে পছন্দ করেন। সবার সাথে সহজেই মিশে যায়। অহংকার বলতে নেই। সন্তানের প্রতি তার অফুরন্ত ভালোবাসা ও দূর্বলতা আছে। মা হেল্পফুল একজন মানুষ। সবাইকে অনেক হেল্প করে। মায়ের এই গুণটা আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আর একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে মা আমার কাছে অসাধারণ।
আনন্দ আলো: মা-মেয়ের এক সঙ্গে স্মৃতিময় কোনো ঘটনা…
আনমোল: ২০১০ সালে আমরা সবাই মিলে একবার ইটালির রোমে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথে সামিনা খালামনিও ছিলেন। সেখানে আমরা ঘুরতে বের হয়েছিলাম। একটা সময় আম্মুরা সবাই ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ওই সময় আম্মুকে বলে আমি পাঁচ মিনিটের জন্য একটা দোকানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে দেখি আম্মুরা নেই। আমি ভয়ে কাতর। ওই সময় আম্মুর কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিলনা। এতমানুষের ভিড়ে তাদেরকে খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল ছিল। প্রায় তিন ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর তাদেরকে না পেয়ে আমি হোটেলে চলে আসলাম। তারপর আম্মুদেরকে খুঁজতে যখন আবার বের হচ্ছিলাম তখন দেখি সবাই হাসতে হাসতে হোটেলে এসে হাজির। ওই মুহ‚র্তের দৃশ্যটা দেখে আমার ভীষন রাগ হচ্ছিল। কারণ মেয়ে হারিয়ে গেছে তারজন্য সবাই টেনশন করবে তা না করে হাসছে। সেদিনের সেই ঘটনা এখনো মনে পড়ে।
ফাহমিদা নবী: আনমোলের বয়স যখন সাতমাস। তখন অল্প অল্প করে হাঁটতে শিখেছে। ওই সময় আমি ওকে নিয়ে স্টুডিওতে যাই। সেখানে ামার প্রথম অ্যালবামের একটি গানের ভয়েস দিচ্ছিলাম। ও তখন চুপ করে গান শুনছিল। রেকডিং শেষে ওকে যখন নীচে নামালাম। তখন দেখি ও নিজে হাঁটতে শুরু করল। সেটা আমার জীবনে সত্যিকারই আনন্দের একটা স্মৃতি।
আনন্দ আলো: যে কাজ করে আপনারা দুজন আনন্দ পান?
ফাহমিদা নবী: ঘর গোছাতে, গাছ লাগাতে, স্কুলের মাঝে থাকতে আনন্দ পাই আর গান করতে ভীষণ আনন্দ লাগে।
আনমোল: আম্মুর গান শুনতে, ঘর গোছাতে আর সমুদ্রের ধারে বেড়াতে।
আনন্দ আলো: মা-মেয়ের প্রিয় পোশাক কী?
ফাহমিদা নবী: আমার প্রিয় পোশাক শাড়ি। শাড়ি পড়তে ভীষন ভালো লাগে। পাশাপাশি শার্ট জিন্স পড়তে ভালো লাগে।
আনমোল: আমি ওয়েস্ট্রার্ন ড্রেস পড়তে পছন্দ করি। শার্ট-জিন্স পড়তেও ভালো লাগে
আনন্দ আলো: আপনারা কে কি খেতে পছন্দ করেন?
ফাহমিদা নবী: আমি জাপানিস ফুড খেতে ভালোবাসি।
আনমোল: আমার কাচ্চি বিরানী খেতে খুবই পছন্দ।
আনন্দ আলো: অবসর সময় কীভাবে কাটান? ফাহিমিদা নবী: আসলে আমার কোনো অবসর নাই। অবসরে আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকতে পছন্দ করি। অনেক সময় অবসর পেলে আমি গান শুনি, লেখালেখি করি। আর ঘুমাই।
আনমোল: অবসরে গান শুনি বই পড়ি। আম্মুর সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করি। মাঝে মধ্যে পরিবারের সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে যাই।
আনন্দ আলো: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ফাহমিদা নবী: ভবিষ্যৎ বলে আমার কাছে কিছু নেই। আজকে যদি ভালো কিছু একটা করতে পারি সেটাই আসলে ভবিষ্যতে তৈরি করে দিবে। সেটাই বলে দিবে আমি অতীতে কেমন ছিলাম। আমার কাছে বর্তমানটাই সবকিছু।
আনমোল: সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন প্রথমে একজন ভালো মানুষ হতে পারি। ভবিষ্যতে আমি একজন ব্যারিষ্টার হতে চাই।