Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

খান জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি থাকুন সুস্থ স্বাভাবিক ও চিনিমুক্ত

আসিফ এ বছর ৪১ বছরে পা দিল। প্রতি বছরের মতো এবারও তার জন্মদিনটা ঘটা করে পালন করেছে স্ত্রী সাজি। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, অফিস কলিগ মিলে প্রায় ১০০ জনের আয়োজন ছিল। তিন তলা বাড়ির ছাদে জন্মদিনের এই অনুষ্ঠান দেখে আসিফের বন্ধু সোহেল তো বলেই বসল দোসৱ মনে হচ্ছে এটা বিয়ের অনুষ্ঠান। খাবারের মেন্যুতে কি নেই পোলাউ, বিরিয়ানী, খিচুড়ি, পায়েস, দই, পরোটা, চমচম, সন্দেশ, ক্ষীর, জর্দ্দা, গরু, খাসি, মুরগীর মাংস, কলিজা ভূনা, চিংড়ি দোপিয়াজা আরো কত কি। এসব লোভনীয় খাবারের গন্ধে সবার ক্ষিদে যেন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুন।

আসিফের বন্ধু টিটু প্রায় আট বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে। মেডিসিনের উপর এমডি করে নিউইর্য়কের বেলভিউ হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরি করছে। আসিফের জন্মদিনে টিটুই ছিল সবার মধ্যমনি। তাকে অনেক দিনপর কাছে পেয়ে বন্ধুরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। আড্ডা থেকে টিটুকে টেনে নিয়ে আসিফ ফুড কর্নারে নিয়ে বলল দেখ আমার স্ত্রী সাজির কান্ড। আমার সব লোভনীয় খাবার বাবুর্চিকে দিয়ে রান্না করিয়েছে। খাবারের আইটেম দেখে টিটু অবাক। আসিফের দিকে তাকিয়ে টিটু ভ্রূ কুচকালো। বললো তোর যে অবস্থা তাতে কিন্তু!

কিন্তু কি রে? আসিফ বলল।

টিটু গম্ভীর হয়ে বলল, তোর হাইট যেন কত? কেন ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর ওজন-এই ধর ৮০ কেজি। বলিস কি ৪১ বছর বয়সে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার একজন মানুষের ওজন ৮০ কেজি? একি করেছিস শরীরটাকে। পেট তো আসেৱ আসেৱ আকাশে উঠে যাচ্ছে। ডায়াবেটিস আছে?

আসিফ বলে জানি না। মেপে দেখিনি কোনো দিন। প্রেসার, কোলস্টোরেল, কোনোটাই মাপা হয়নি।

তাহলে বেঁচে আছিস কী ভাবে? সারাদিনে কী খাস? আসিফ বলে, সকালে বাসায় নাসৱা করি মিষ্টি, হালুয়া পরোটা আর এককাপ গরম দুধ চা দিয়ে। দুপুরে অফিসের ডাইনিং-এ খাই। রাতে বাসায় কিরে কবজি ডুবিয়ে মাছ মাংস ভাত খাই। তোর ভাবীর হাতের রান্না বলে কথা। কি যে মজা করে রান্না করে সাজি। ইদানিং রাতে খাবারের পর দুপুরে ও সকালে বেশ অবসাদ লাগেরে দোসৱ। শরীর চলতে চায় না। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়ি। হাটতে গেলেও ঘুম আসে।

সারাদিন চা কয় কাপ খাস? টিটুর প্রশ্নের উত্তরে আসিফ বলল- তা কম করে হলেও ১০কাপ।

১০ কাপ? নিশ্চয় বেশি চিনি দুধ তোর পছন্দ।

ZeroCal-1ব্যাটা চায়ের স্বাদই তো বেশি চিনি আর বেশি দুধে। জাপানীরা বলে না চায়ের আসল স্বাদ হলো চিনি। কিন্তু ইদানিং আমার অবসাদ তো বেড়েই চলেছে। বলতো কি করি?

টিটু বলে? অবসাদ দুর হবে কী করে- বেশি করে দুধ চিনি খাও, মিষ্টি মন্ডা খাও। ইস্‌! শরীরটাকে কি বানিয়েছিস। বারোটা বানিয়েছিস নিজের দেহকে। ভাবী কিছু বলে না? মাথার চুলও পেকেছে দেখছি।

তোর ভাবী তো আমাকে ছেলে মেয়ের সামনে বুড়ো বলে ডাকে। আমার না খুব লজ্জা হয়রে।

অনুষ্ঠান শেষে চলে আসার সময় টিটু বলল, কালতো শুক্রবার অফিস বন্ধ। বিকেলে ভাবীকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আয় এক সঙ্গে চা খাবো। আর দেখি তোর জন্য কিছু করা যায় কিনা।

জন্মদিনের পার্টি করে রাতে আসিফের ভালো ঘুম হয়নি বন্ধু টিটুর কথায়। সারাদিন মন মরা থেকে বিকেলে টিুটুর বাসায় গিয়ে আসিফ বলে আমার এখন কী করা উচিৎ বলতো টিটু। কয়দিন ধরে মাথা ঘুরছে এবং বমি বমি লাগে। মনে হয় কোলেস্টরল বেড়েছে সঙ্গে হাইপ্রেসারও বোধ হয় আছে।

বন্ধু আসিফের কথায় টিটু মুচকি হেসে বলে এই আমাদের একটা সমস্যা, শরীরে কিছু হলে ডাক্তার হয়ে যাই সবাই। শোন, নিজে ডাক্তার না হয়ে ডাক্তারের কাছে আগে যাওয়া উচিৎ। চা খাওয়ার পর আসিফের প্রেসার, পালস, হার্ট বিট ও অন্যান্য সাধারন পরীক্ষা করে টিটু বললো- আজ থেকে তোকে ডায়েট করতে হবে। সব কিছুই খেতে পারবি তবে পরিমিত। আর সাধারন চিনি খাওয়া একদম বাদ।

আসিফ যেন আকাশ থেকে পড়লো। তাহলে চা খাবো কিভাবে? চিনি ছাড়া চা খাওয়া যাবে নাকি? টিটু বললো- কে বললো চিনি খাওয়া যাবে না। চিনি অবশ্যই খাবি তবে জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি। এখন থেকে এই চিনিই হবে তোর সঙ্গী। আর এই সঙ্গীকে নিয়ে যদি পথ চলতে পারিস তাহলে কখনোই পেট আকাশে উঠবে না। এই নে জিরো ক্যালরী সম্পন্ন একটি চিনির প্যাকেট।

আসিফ গত তিনটি মাস বন্ধু টিটুর পরামর্শে সাধারণ সব খাবার খেয়েছে। তবে দই, পায়েস ও চায়ে চিনি না দিয়ে খাবারে জিরো ক্যালরি চিনি ব্যবহার করেছে আসিফ। বাইরে চর্বি জাতীয় ও মুখরোচক খাবার বর্জন করেছে। যার ফলে আসিফ এখন অনেকটাই সুস্থ, আগের মতো মাথা ব্যথা নেই। নেই অবসাদ, ঝিমুনি, হাইপ্রেসার ও ঘুম ঘুম ভাব।

প্রিয় পাঠক, সাম্প্রতিক কালের এক গবেষনায় দেখা গেছে দেশে উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানী করা চিনিতে নানান ধরনের কেমিক্যাল মেশানোর কারনে মানুষের প্রচুর অসুখ বিসুখ দেখা দিচ্ছে। যাদের বয়স ৪০ অতিক্রম করেছে ক্যালরীসম্পন্ন চিনি খাওয়ার ফলে তাদের হাই প্রেসার, ডায়বেটিস, অবসাদগ্রস্থ হওয়া, রক্তে কোলস্টোরল বেড়ে যাওয়া সহ নানান, অসুখে আক্রানৱ হচ্ছেন। ডাক্তারের মতে চিনি বর্জন করে জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করলে মারাত্মক সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি ব্যবহার করে আপনি যে উপকার পাবেন তার মধ্যে আছে-

ফ ডায়াবেটিসের ঝুকি কমবে।

ফ চা, কফি ও পায়েশের সঙ্গে এই চিনি ব্যবহার করে খেলে স্বাদ সাধারন চিনির মতোই মনে হবে।

ফ চিনি ব্যবহারে প্রেসারের ঝুকি কমাবে।

ফ যাদের ডায়বেটিস আছে তারাও এই চিনি নিশ্চিনেৱ খেতে পারবেন।

ফ সব বয়সী মানুষ এই চিনি সব খাবারের সঙ্গে খেতে পারবেন।

ফ যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন তারা এই চিনি খেলে অবসাদ দুর হয়ে যাবে।

ফ এই চিনি সব ধরনের খাবারে ব্যবহার করা যাবে যেমন দই, মিষ্টি, পায়েশ, শরবত সহ মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার।

বাজারে অনেক জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনির প্যাকেট পাওয়া যায়। দাম সাধারন চিনির মতোই। সাধারন চিনির চেয়ে দানা একটু ছোট। স্বচ্ছ ও পরিস্কার সাদা দানার এই জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি বাজারের প্রতিটি ষ্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আপনাকে আসল জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি বেছে নিতে হবে। ভালো ব্র্যান্ডের জিরো ক্যালরি চিনি কিনতে ভুলবেনা।

জিরো ক্যালরি সম্পন্ন চিনি শুধু খেলেই ডায়েট সম্পন্ন হবে না। তার সঙ্গে ব্যায়াম করাও জরুরি। অনেকে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় পাননা। তাঁরা বাসায় হালকা ব্যায়ামও করতে পারেন।

শুধু অতিরিক্ত মোটা বা মেদবহুল মানুষ জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি খাবেন এমন কোনো কথা নেই। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, যারা আগামী দিনে সুস্থ থাকতে চান, সুন্দর স্বাভাবিক জীবন চান তাদের এই চিনি খাওয়া উচিৎ। এই চিনি খাওয়ার ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। ডাক্তাররাও ৪০ উর্ধ্ব বয়সী মানুষকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাধারন চিনি ব্যবহার না করার। অনেকেই চায়ে কম চিনি খান অর্থাৎ এক কাপে এক বা দেড় চামচ চিনি খান। কিন্তু কম চিনি খেলেও তাতে ক্যালরি কিন্তু ঠিকই থাকে। তাই যতটুকু সম্ভব জিরো ক্যালরী সম্পন্ন চিনি খেলে স্বাস্থ্য ঝুকি অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপ্রেসার ও কোলস্টোরেল কম হবে।