Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কে সাহসী? হিল্লোল নাকি নওশীন?

দূর থেকে দেখা গেল ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে। কারও জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ছেলেটি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাঁড়িয়েই আছে। কাছে গিয়ে ছেলেটির এই অপেক্ষায় থাকার কারণটি জানা গেল। ছেলেটির মুখ থেকেই শোনা যাক ঘটনা কী? কেন সে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় প্রতিদিনই ছেলেটি এক গুচ্ছ গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা ফুলের তোড়া নিয়ে উত্তরার এই সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। তার প্রিয় অভিনয়শিল্পী নওশীন আর হিল্লোলকে একঝলক দেখার জন্যই দাঁড়িয়ে থাকা। হ্যাঁ, পাঠক নগরীর উত্তরায় ১০ নম্বর সেক্টরে নওশীন-হিল্লোলের বাসায় যাওয়ার পথেই বিষয়টি নজরে পড়ল। ক’দিন আগে এই তারকা জুটি অভিনীত নতুন ছবি ‘মুখোশ মানুষ’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তাদের এমন ভক্তের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। ‘মুখোশ মানুষ’ মুক্তির আগ থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকা ও ফিল্ম পাড়ায় বেশ আলোচনা শুরু হয়। এটার অবশ্য কারণও রয়েছে। একে তো নওশীন-হিল্লোল বাসৱবে জুটি আবার পর্দায়ও তাদের একসঙ্গে এটি প্রথম চলচ্চিত্র। অন্যদিকে ছবিটি সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক একটি ছবি হওয়ায় নওশীনকে বেশ সাহসী কিছু দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছে। অবশ্য এ নিয়েও নেতিবাচক কিছু আলোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। নিজেদের ক্যারিয়ার এবং সমসাময়িক ব্যসৱতা নিয়ে আনন্দ আলোর মুখোমুখি এই তারকা জুটি। নগরীর উত্তরায় তাদের বাসায় চলা দীর্ঘ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধার হলো। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল

নওশীন তখনো রেডি হচ্ছিলেন। তাই ড্রয়িং রুমে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন হিল্লোল। আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে আগে ছবি তোলার বিষয়টি জানানো হয়। অপেক্ষা নওশীনের জন্য। মিনিট দশেক পরেই এলেন নওশীন। মুখে এক রাশ হাসি ছড়িয়ে দু’চার বাক্য বিনিময়। বেশ উচ্ছ্বসিত মনে হলো নওশীনকে। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন ‘মুখোশ মানুষ’ ছবিটিকে। একদিকে দু’জনের একসঙ্গে প্রথম ছবি মুক্তি অন্যদিকে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া। যদিও এর আগে নওশীন ও হিল্লোল জুটি হয়ে ‘হ্যালো অমিত’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। নানান কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। তাই তো একসঙ্গে জুটি হয়ে তাদের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখোশ মানুষ’। এজন্য নওশীনের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই। ছবিটিতে অভিনয় করার পেছনের গল্প প্রথমে ব্যাখ্যা করেন হিল্লোল। বললেন, ‘কয়েক বছর আগে সাইবার ক্রাইম নিয়ে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেন হয় তাদের দু’জনের। এটি পরিচালনা করেন একই পরিচালক ইয়াসির আরাফাত জুয়েল। শর্ট ফিল্মটি ইউটিউবে বেশ সাড়া ফেলে। এরপর হঠাৎ একদিন জুয়েল ফোন করে বলেন শর্ট ফিল্মটাকে আরো বড় ক্যানভাসে নির্মাণ করতে চান। অর্থাৎ এটিকে ছবি বানাতে চান। প্রোডিউসার পাওয়া গেছে। এরপর অনেক সুন্দর একটি চিত্রনাট্য করে ছবিটির শুটিং-এ যাই আমরা।’

Hillol-Nowshin-নওশীন বলেন, ‘অন্যরকম একটি গল্পের ছবি ‘মুখোশ মানুষ’। সাইবার ক্রাইম কীভাবে একটি মেয়ের সংসার ভেঙে দিতে পারে তাই ছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তাই নয়- ছবিটিতে আমি একটি সাহসী চরিত্রে অভিনয় করেছি। এ নিয়ে অবশ্য আমাকে কম কথা শুনতে হয়নি। ছবির ট্রেইলর থেকে শুরু করে মুক্তি পর্যনৱ অনেকেই নেতিবাচক কথা বলেছেন। এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম নীল। আমার কথা হচ্ছে ছবির গল্পে নীলের চরিত্র যেমন হওয়া উচিত আমি তো সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমাকে কেন মানুষ নওশীন হিসেবে দেখছেন? ব্যক্তি নওশীনের সঙ্গে চরিত্রের মিল খুঁজলে তো হবে না। আমি তো গল্পের ঐ চরিত্রটিই প্লে করেছি। তাই ঐ চরিত্রটি যা যা করেছে আমিও তা তা করেছি। আজকে কলকাতায় ঋতুপর্ণা, স্বসিৱকা থেকে শুরু করে অনেক নামিদামি অভিনেত্রী সব চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করছেন। তাদের ছবি আবার আমাদের এখানের ইন্টাল্যাকচুয়াল দর্শকরা ঠিকই দেখছেন। কিন্তু আমরা অভিনয় করলেই সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আসলে আমাদের মানসিকতার যেদিন পরিবর্তন হবে না, সেদিন পর্যনৱ আমরা ভিন্ন ভিন্ন গল্পের ছবি দেখতে পাবো না।’ নওশীন কিছুটা হতাশার সুরেই কথাগুলো বললেন।

খানিক সময় নিয়ে আবার বললেন, ‘আমি যখন এই চরিত্রটিতে অভিনয় করার প্রসৱাব পাই তখন বিষয়টা নিয়ে যে কিছুদিন চিনৱা করিনি তা নয়। আমার সংসার আছে, সনৱান আছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন আছে- তাই চিনৱাটা ছিল। এরপর আমার স্বামী (হিল্লোল) যখন সাহস দিল এবং বেশ উৎসাহ দিল তখনই অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেই। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়- আমরা যারা অভিনয় করি তাদের মধ্যে অনেকেই চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চায়। নিজেকে নানান চরিত্রে উপস্থাপন করতে চায়। শুধু আশপাশ এবং সমাজের নানান কথায় পিছিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও ক্ষতি হচ্ছে। আমরা একটা জায়গায় বন্দী হয়ে আছি।’

ছবিটি নিয়ে কেমন সাড়া পেয়েছেন? এমন প্রশ্নে হিল্লোল বলেন, ‘বেশ সাড়া পেয়েছি। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি ২৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। প্রায় প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল গেছে। তবে আমাদের এখানে ছবি মুক্তি, বুকিং এজেন্টসহ এফডিসি ঘরানার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় একটি ভালো চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে পৌঁছে না। আবার একটা শ্রেণি আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার ছবিগুলোকে হুমকিও মনে করছেন। গত দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে যতগুলো ভালো ভালো ছবি মুক্তি পেয়েছে তার অধিকাংশ ছবিই টেলিভিশন মিডিয়ার লোকজনের বানানো ছবি। তাই তো এফডিসি ঘরানার কিছু মানুষ এই টেলিভিশন মিডিয়ার নির্মাতা-কলাকুশলীদের তাদের জন্য হুমকি মনে করে। তাই তো এই ঘরানার ছবি হলেই সেটাকে নানানভাবে দাবিয়ে রাখতে চান’

এত গেল চলচ্চিত্র নিয়ে নানান আলোচনা। আড্ডার এই পর্যায়ে উঠে আসে এই তারকা জুটির বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে আলাপচারিতা। শুরুতে নওশীন বলেন, ‘আমি অফিস-শুটিং আর সংসার নিয়েই ব্যসৱ থাকি। তবে টানা শুটিং থাকলে শুটিং করি আবার না থাকলে বাসায় সময় দেই।’ হিল্লোল বলেন, ‘মুখোশ মানুষ’ মুক্তি নিয়ে বেশ ব্যস্ততা ছিল। এখনও ছবিটি নিয়ে কিছুটা ব্যস্ততা তো রয়েছেই। আরো কয়েক সপ্তাহ ছবিটি বিভিন্ন হলে চলবে। এরপর আবার নিয়মিত নাটকের শুটিং শুরু করবো।’

Hillol-Nowshin-1আড্ডায় এবার আলোচনা শুরু হয় টিভি নাটকের বিভিন্ন দিক নিয়ে। এই সময়ে টিভি নাটকের গল্প এবং নির্মাণশৈলী নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। হিল্লোল বলেন, ‘অনেক ভালো ভালো গল্পের নাটক নির্মাণ হচ্ছে। অনেক তরুণ ভালো মানের নাটক নির্মাণ করছেন। তবে দর্শক এখন টিভির চেয়ে ইউটিউবে বেশি নাটক-সিনেমা দেখছেন। দর্শক আসলে একটানা বসে একটি নাটক দেখতে চায়। তাই বিজ্ঞাপন কমিয়ে দর্শকদের নাটক তথা টিভি দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।’ নওশীন বলেন, ‘আমাদের নাটক আসলে দর্শক দেখতে চায়। অনেক কম বাজেটে আমাদের এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর নাটক তৈরি হচ্ছে। তবে সেটা দর্শককে দেখানো উচিত’।

সংসারে নিজেদের সময় নিয়েও কথা বলেন এই তারকা জুটি। শত ব্যসৱতার মধ্যেও দু’জন মানুষ সংসারে সময় দিতে দেন না। হিল্লোল বলেন, ‘কাজ থাকলে আমি বাইরে থাকি নতুবা বাসায়। আর বাইরে কাজের জন্য গেলেও কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোজা বাসায় চলে আসি। আমি আসলে ঘরকুণো স্বভাবের একজন মানুষ। কোনো আড্ডা কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে একদমই না গেলে চলবে না তখন যাই। ঘরই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। টানা ব্যসৱতা শেষে লম্বা ছুটিতে যাই আমরা। সেটা হতে পারে দেশ কিংবা বিদেশের যেকোনো জায়গায়।’

নওশীন বলেন, ‘শুটিং বা কাজ থাকলে তা করে সোজা বাসায় চলে আসি। মুভি দেখা, গান শোনা এবং নিজেকে সময় দেয়া- সেটাই করি আমি। আর সংসারটা তো আমারই, তাই এটাকে গুছিয়েও তো রাখতে হয়!’ নওশীনের এমন কথায় হিল্লোল যেন বেশ খুশি হলেন। কথোপকথন শেষে দু’জনকে নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠলাম আমরা। ক্লিক ক্লিক শব্দে দু’জনের ভালোবাসা আর ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত আনন্দ আলোর আলোকচিত্রির ক্যামেরায় ধরা পড়ল। ছবিগুলো বেশ সুন্দর। এমনই সুন্দর হোক এই শিল্পী দম্পতির যৌথ জীবন। অনেক শুভকামনা আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে।