সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
শাহাবুদ্দীন নাগরী: এবারের গ্রন্থমেলায় কিশোর উপযোগী আমার একটি গল্পসংকলন প্রকাশ হবার কথা। সূচীপত্র থেকে প্রকাশিতব্য এ গল্প সংকলনের নাম রেখেছি ‘আমাদের বিলু মামা’। ছোটদের জন্য লিখছি আমি বহুকাল ধরে। ১৯৭৮ সালে মুক্তধারা থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো আমার প্রথম ছড়ার বই ‘নীল পাহাড়ের ছড়া’। মনে পড়ছে, প্রকাশের জন্য আমি চিত্তদা’র (চিত্তরঞ্জন সাহা) কাছে ডাকযোগে দু’টি ছড়ার বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছিলাম। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অপেক্ষার প্রহর শেষে চিত্তদা’র স্বাক্ষরে একটি চিঠি পেয়েছিলাম। তিনি লিখেছিলেন, দু’টি পাণ্ডুলিপি থেকে বাছাই করে ছড়া নিয়ে একটি বই প্রকাশ করতে আমি রাজি আছি কি না। আমার সম্মতি পেয়ে তাঁর সম্পাদনা পরিষদ দু’টি পাণ্ডুলিপি থেকে ছড়া নিয়ে চব্বিশ পৃষ্ঠার একটি ছড়ার বই প্রকাশ করবার অনুমোদন দিয়েছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে বহু চিঠি চালাচালি শেষে প্রকাশিত হয়েছিলো ‘নীল পাহাড়ের ছড়া’। প্রকাশিত বইটি হাতে পেয়ে আমি ছড়াগুলো পড়তে পড়তে খেয়াল করি, সম্পদনা পরিষদ এতোটুকু ভুল করেননি ছড়াগুলো নির্বাচনে। আমি পাণ্ডুলিপি তৈরির সময় শিশু এবং কিশোর উভয় বয়সী পাঠকের ছড়া একসাথে মিলিয়ে ফেলেছিলাম। বইটিতে তা হয় নি। বইটির সবগুলো ছড়াই ছিলো শিশু উপযোগী। আসলে সম্পাদনা একটি মূল্যবান বিষয়। মুক্তধারার সম্পদনা পরিষদ গভীর পর্যবেক্ষণের পর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। আমরা কখন কোন বয়সী পাঠকের জন্য লিখছি। অনেক সময় তা খেয়াল করি না। পাঁচটি ছড়া যে শিশুরা বুঝবে না, এজন্য আরো একটু বড় হতে হবে ওদেরকে, কিশোর হতে হবে, তবেই তারা বুঝবে ছড়াটির মর্মার্থ, সেটা লেখক হিসেবে আমাদের মাথায় থাকে না। শিশু-কিশোরকে আমরা একবয়সী ভেবে গুলিয়ে ফেলি। ফলে, অনেক লেখা আমরা যে পানিতে ফেলে দিচ্ছি অথবা সঠিক পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি না, এই ব্যর্থতা লেখক-প্রকাশকের। এই কথাগুলো বলার কারণ আমার একটাই। শিশু, কিশোর বা বয়সী পাঠকের জন্য বই প্রকাশের পূর্বে একটি ভালো সম্পাদনা দরকার। কিশোরদের জন্য লেখা গল্প এবং শিশুদের জন্য লেখা গল্প এক হতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে এই কাজটি অহরহ হচ্ছে এবং আমরা বুঝে না-বুঝে শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছি কিশোরদের বই, বা কিশোরদের পড়তে দিচ্ছি শিশুদের জন্য লেখা বই। অথবা দু’টোকে গুবলেট করে দিচ্ছি মিলিয়ে-মিশিয়ে। আমি, ‘আমাদের বিলু মামা’ বইটির চারটি গল্প খুবই সর্তকতার সঙ্গে নির্বাচন করেছি কিশোরদের জন্য। বলাই বাহুল্য, আমার শ্রম এবং প্রকাশকের লগ্নী করা অর্থ কীভাবে ফিরে আসবে জানি না। এখনকার কিশোরদের হাতে স্মার্টফোনে ইন্টারনেট প্রযুক্তির রঙিন পৃথিবী। আমি ট্রেনে-বাসে-রাস্তায় কিশোরদের দেখেছি ফোনে নানান গেম খেলতে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ওরা মগ্ন হয়ে যাচ্ছে ঐসব প্রযুক্তির ব্যবহার করে মনের খোরাক মেটাতে। সেই কিশোরদের হাতে ৬৪পৃষ্ঠার একটি বই, যেটি আবার কষ্ট করে পড়ে আনন্দ উদ্ধার করতে হবে। কতোটুকু আকর্ষণীয় হবে? কতোটুকু আগ্রহী করবে ওদেরকে? আমি জানি না। খসখসে সাদা কাগজে ছাপা একটি বই নিয়ে তাই লেখক-প্রকাশক শঙ্কিত। বইয়ে রঙ মাখাতে গেলে দাম বেড়ে যায়, পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার কথাও ভাবতে হয়, সেই বইটির জন্য আমরা কিশোরদের কীভাবে অনুপ্রাণিত করবো? আজকের শিশু-কিশোর সাহিত্য তেমনই হাজার হাজার প্রশ্ন নিয়ে দোল খাচ্ছে সাহিত্যের ভুবনে। আমরা সবাই বিষয়গুলো ভেবে দেখতে পারি।