Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কিছু ভুল ছাড়া সবটাই আনন্দের!-ন্যান্সি

মোহাম্মদ তারেক

আনন্দ আলো: আপনি কী ন্যান্সি?

ন্যান্সি: হ্যাঁ। আমি নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি

আনন্দ আলো: এত কিছু থাকতে গানে এলেন কেন?

ন্যান্সি: আমার বয়স তখন তিন বছর। ঐ সময় থেকে আমি গুন গুন করে গান গাইতাম। একদিন বাবা-মা দেখলেন আমি এ বয়সেই কোথাও গান শুনলে সেই গান গুনগুনিয়ে গাইতে থাকি। তারপর ওস্তাদ তারাপদ দাসের কাছে আমাকে তালিম নেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এভাবেই শুরু হলো আমার গানের চর্চা।

আনন্দ আলো: জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যে গানটি?

ন্যান্সি: এসএসসি পরীক্ষার পর আমি চলে এলাম ঢাকায়। কলেজে ভর্তি হলাম। তখন পড়াশোনা আর গান নিয়ে ব্যস্ত, হাবিব ভাই আমাকে ডাকলেন এসএ হক অলীকের ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ ছবিতে ‘পৃথিবীর যত সুখ’ গানটি গাওয়ার জন্য। আমি বলব এই গানটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আনন্দ আলো: জীবনের প্রথম অ্যালবাম?

ন্যান্সি: ২০০৯ সালে সংগীতার ব্যানারে প্রকাশিত হয়েছিল আমার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ভালোবাসা অধরা’। জীবনের প্রথম সলো অ্যালবাম আমি খুবই এক্সসাইটেড ছিলাম।

আনন্দ আলো: আপনার গাওয়া কোন গানটি এখনো হৃদয়ে গেঁথে আছে?

ন্যান্সি: আমার গাওয়া অনেক গানই হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে দ্বিধা, ভালোবাসব বাসবরে বন্ধু, পৃথিবীর যত সুখ, বাহির বলে দূরে থাকুক, আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, ভালোবাসাই হলো না, চাঁদের আলোয় মুখটা তোমার গান গুলো মাঝে মাঝে হৃদয়ে নাড়া দেয়।

আনন্দ আলো: গান গেয়ে সেরা প্রাপ্তি

ন্যান্সি: ২০১১ সালে ‘প্রজাপতি’ ছবির ‘দু দিকে বসবাস’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। গানটি লিখেছিলেন জাহিদ আকবর আর সুর করেছিলেন হাবিব ভাই। এটা আমার জীবনের একটি বড় পাওয়া। প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার স্মৃতি আমি কখনোই ভুলবো না। এছাড়া আমি ২০০৯ সাল থেকে টানা চারবার মেরিল প্রথম আলো প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার পেয়েছি।

আনন্দ আলো: সংগীতাঙ্গনে আসার পেছনে কার অবদান বড় করে দেখতে চান?

ন্যান্সি: সংগীতাঙ্গনে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। ছোটবেলায় মা আমাকে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে গান শেখাতেন। আমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতাম। অসংখ্য পুরস্কারও পেয়েছিলাম। মায়ের সাপোর্ট না পেলে আমি ন্যান্সি হতে পারতাম না।

আনন্দ আলো: স্টুডিওতে প্রথম দিন…

ন্যান্সি: প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যাবেলায় আমি বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। হঠাৎ করে বাবা বললেন, ঢাকা থেকে ডাক এসেছে। তোমাকে ঢাকায় যেতে হবে। ফেরদৌস ওয়াহিদের ছেলে হাবিব ওয়াহিদ তোমাকে দিয়ে গান করাবেন। খবরটা শুনে সেদিন আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। পরে ঢাকায় এসে হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করলাম। সে সময় হাবিব ভাই ‘হৃদয়ের কথা’ নামের একটি ছবির গান করছিলেন। ভালোবাসব বাসব রে, বন্ধু তোমাকে গানটিতে একজন নারী কণ্ঠের প্রয়োজন। হাবিব ভাই আমাকে দিয়েই গানটি করান। ছবিটি সুপার হিট হলো।

আনন্দ আলো: আপনার কাছে সংগীত কী?

ন্যান্সি: আমার কাছে সংগীত হচ্ছে আমার প্রাণ এবং সাধনার বিষয়। সাধনা ছাড়া গানের জগতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। গানই একমাত্র বিষয় যা দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করা যায় সুরে সুরে।

আনন্দ আলো: জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতি…

ন্যান্সি: আমি যখন প্রথম জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাই তখন আমি আমার মায়ের চোখে পানি এবং মুখে হাসি দেখতে পেয়েছিলাম। সে সময় আমার মনে হয়েছিল আমি কিছু একটা করতে পেরেছি মায়ের জন্য। সেটা আমার অনেক আনন্দের ছিল। আমার আরো একটি আনন্দের স্মৃতি হচ্ছে মেয়ে রোদেলা যখন জন্ম নিল। আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের স্মৃতি।

আনন্দ আলো: আর দুঃখের স্মৃতি…

ন্যান্সি: দুঃখের স্মৃতি অসংখ্য। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলবো। আমার মা যখন আমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। আমি যখন আমার সন্তান হারালাম। এইসবই আমার দুঃখের স্মৃতি। এই স্মৃতিগুলো আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।

আনন্দ আলো: প্রিয়জনের জন্য গান…

Nancy-1ন্যান্সি: ২০১২ সালের কথা। হঠাৎ করেই মা মারা যান। মাকে হারিয়ে খুব ভেঙে পড়ি। সেই সময় পরিকল্পনা করি মাকে নিয়ে একটি গান বাঁধার। গানটি লেখার দায়িত্ব দেই শাকিলুর রহমান প্রিন্সকে। তিনি লিখেন, ‘হয় না এখন ভোরে ওঠা, হয় না আর সূর্য দেখা/ স্কুলের টিফিন নাই প্রতিদিন, মাগো তোমার বকাঝকা/ বিছানা চাদর জড়িয়ে বুকে তোমার আদর খুঁজি/ মুখটা তোমার দেখবো বলে ক্লান্ত এ দুচোখ বুঝি। সুরও দেন প্রিন্স। মা বেঁচে থাকতে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছি অথচ মাকে নিয়ে কোনো গান করতে পারিনি। এটা আমার অনেক বড় একটা আফসোস। হঠাৎ করে তিনি এভাবে চলে যাবেন ভাবিনি। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো এবং তার স্মৃতি ধরে রাখতেই ‘মা’ শিরোনামের গানটি করেছিলাম।

আনন্দ আলো: জীবনের যে সময়টা ফ্রেমে বন্দী করে রাখার মতো…

ন্যান্সি: আমার পুরো জীবনটা। তবে কিছু কিছু ভুল ছাড়া।

আনন্দ আলো: আপনার মতে আগে গান না ভিডিও…

ন্যান্সি: একটি গানের অডিও ভালো হতে হবে আগে। কারণ গান শোনার বিষয়। শুনতে ভালো লাগলে তবেই সেটার ভিডিও করা যেতে পারে। আর আমি ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিওতে বিশ্বাসী নই। এখন অনেক মিউজিক ভিডিওতে দেখা যায় উগ্র মডেল ব্যবহার করা হয়। মিউজিক ভিডিওর সঙ্গে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি খুব সিম্পলের মধ্যে ভিডিও করতে চাই।

আনন্দ আলো: আপনি গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন। আপনার বিনোদন কী?

ন্যান্সি: আমি গান করতে বেশি পছন্দ করি। এটা আমার বিনোদন।

আনন্দ আলো: খুব রেগে যাই যখন…

ন্যান্সি: যখন দেখি কেউ শিল্প ও শিল্পীর সঙ্গে প্রতারণা করে আর কেউ মিথ্যা কথা বলে।

আনন্দ আলো: গানের বাইরে ন্যান্সি কী করেন?

ন্যান্সি: তেমন কিছু না। স্বামী-সন্তানদের সময় দেই। আসলে গানের বাইরে আমার অন্য কোনো জগৎ নেই।

আনন্দ আলো: আপনার সবচেয়ে দুর্বল দিক…

ন্যান্সি: আমি সহজ সরল একজন মানুষ। আমি সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করি। এটা আমার সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক।

আনন্দ আলো: হাড় ভাঙলে জোড়া লাগে, মন ভাঙলে জোড়া লাগে না কেন?

ন্যান্সি: মন ভাঙলে জোড়া লাগে না। কারণ মনের তো গøু নেই।

আনন্দ আলো: কৃষ্ণ মানে কালো, কৃষ্ণচূড়া লাল কেন?

ন্যান্সি: কৃষ্ণ মানে কালোÑ এটা গাছেরা জানে না বলে।