Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এলআরবি’র ২৮ বছর জাদুটা হচ্ছে ভালোবাসা-আইয়ুব বাচ্চু

মোহাম্মদ তারেক
দেশের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি সাফল্যের সঙ্গে ২৭ বছর পার করে ২৮ বছরে পা দিয়েছে। এই দীর্ঘ পথচলায় এলআরবি অর্জন করেছে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এব্যান্ডের তৈরি হয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ২৭ বছরে এব্যান্ডটি অসাধারণ কিছু গান সৃষ্টি করেছে। ৫ এপ্রিল ছিল এলআরবি’র ২৮তম জন্মদিন। ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে নিয়ে নানা আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যান্ডের সদস্যরা জন্মদিনটি উদযাপন করল একেবারেই অন্যরকম আবহে। একদম ঘরোয়া পরিবেশে। এলআরবির প্র্যাকটিস প্যাড এবি কিচেন ব্যতিক্রমী আয়োজনে দিনটি উদযাপন করে এলআরবি। কথা আর গানের আনন্দে কেক কাটা আর মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্য দিয়েই এবি কিচেনের বিল্ডিংয়ের শিশুরা তাদের সঙ্গে অন্যরকম একটি দিন কাটায়। এর আগে এলআরবি ২৫ বছরের জন্মদিনটি রায়ের বাজারের জাগো ফাউন্ডেশন পরিচালিত একটি স্কুলের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে উদযাপন করেছিল। দুই বছর আগে নিজ উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চু জাগোর দুটি শিশুর লেখা পড়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যা এখনো তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। সেদিনের সুজন আর মর্জিনা এখন নবম আর ৭ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী। তারাও এলআরবির ২৮তম জন্মদিনে আবেগঘন কিছু মুহূর্ত পার করে।
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবি ২৭ বছর পার করে ২৮ বছরে পদার্পণ করেছে। এতটা বছর আপনার হাত ধরে এলআরবি পাড়ি দিয়েছে সফলতার সঙ্গে। অনেক বাধা, বিপত্তি, সমস্যা তো ছিলই। কিন্তু তারপরও সবকিছুকে উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত আসার অনুভ‚তিটা কেমন? প্রশ্ন করতেই আইয়ুব বাচ্চু বলেন, এ অনুভ‚তি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এলআরবির ২৮ বছরে পদার্পণে আমিসহ দলের প্রতিটি সদস্য কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করছি গান পাগল মানুষগুলোর প্রতি। ভক্ত শ্রোতাসহ অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় আমরা আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। তাদের সমর্থন না পেলে ২৭টি বছর পার করা অসাধ্য ছিল। দেখতে দেখতে কখন যে ২৭ বছর চলে গেল এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।
একটি টিমকে এতটা বছর একত্রিত করে ধরে রাখার জাদুটা আসলে কী?
এ প্রসঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, জাদু হচ্ছে ভালোবাসা। একটি ব্যান্ডকে একত্রিত করে রাখার পেছনে ¯েœহ, মায়ামমতা, ভালোবাসা ছাড়া কিছু না। একজন পিতা তার সন্তানকে, স্ত্রীকে সংসার জীবনে যেভাবে গুছিয়ে রাখেন আমরা ব্যাÐ মিউজিককেও সেভাবে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। ব্যান্ড মিউজিক হচ্ছে একটা পরিবার। একজনের সমস্যা মানে আমার সমস্যা, আমার সমস্যা মানে সহযোগি অন্যজনেরও সমস্যা। এটা ভেবেই আমাদের এগুতে হবে।
দেশ বরেণ্য ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্যান্ড হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল এলআরবি। শুরুর দিকে দলের লাইনআপে ছিলেন ব্যান্ডটির দলনেতা, ভোকাল ও গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু, বেইজে স্বপন, ড্রামসে জয় ও কি-বোর্ডে এসআই টুটুল। এক সময় জয়ের স্থলাভিষিক্ত হন মিল্টন। দুই বছর পর মিল্টন পাড়ি জমান লন্ডনে। তার জায়গায় আসেন রিয়াদ। ২০০২ সালে এস আই টুটুল ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে গেলে স্থায়ী কোনো কি-বোর্ডিস্ট ছাড়াই গান চালিয়ে যায় ব্যান্ডটি। সে বছরই এলআরবিতে গিটারিস্ট হিসেবে বাজাতে শুরু করেন মাসুদ। মাঝে অতিথি হিসেবে অনেকে বাজিয়েছেন। রিয়াদ অসুস্থ হলে তার স্থলে বাজিয়েছেন সুমন। সুস্থ হয়ে ফিরলেও কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান রিয়াদ। তার জায়গায় ২০০৬ সালে ড্রামসের হাল ধরেন রোমেল। ১৬ বছর ধরে এ লাইন আপ নিয়েই চলছে এলআরবি। মাঝে মধ্যে ব্যান্ডটির সঙ্গে অতিথি হিসেবে পারফর্ম করতে দেখা যায় আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুবকে।
শুরুতে নিশ্চয়ই অনেক সমস্যা হয়েছিল?
আইয়ুব বাচ্চু বলেন, ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আমরা পথচলা শুরু করেছিলাম। সে সময় অনেকে আমাদের পাগল বলত। কিন্তু এতটা বছর পথ পাড়ি দেয়ার পর আজ প্রশ্ন জাগে আসলে আমরা পাগল ছিলাম, নাকি যারা আমাদের বলত তারা? কারণ এলআরবি সব সময় শ্রোতাদের ব্যান্ড। মিউজিশিয়ানদের আসলে কোনো খাদ্য দরকার হয় না। তাদের কোনো পাকস্থলি নেই। শ্রোতাদের ভালোবাসাই মিউজিশিয়ানদের ক্ষুধা মেটায়। শ্রোতাদের ভালোবাসাই আমাদের বাঁচার শক্তি। সুতরাং আমি অনুরোধ করব মিউজিশিয়ানদের তাদের যোগ্য সম্মানটা দিতে।
মিউজিশিয়ানদের অবস্থা এখন কেমন বলে মনে হয় আপনার কাছে?
বাচ্চু বলেন, একটি ব্যান্ড একটি সংসারের মতো। একটি সংসারে যেমন সুখ-দুঃখ থাকে, তেমনি একটি ব্যান্ডের মধ্যেও থাকে। এটি ব্যান্ডের মধ্যে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা তা বাইরে প্রকাশ করব কেন? তিনি আরও বলেন, শীর্ষ ব্যান্ডগুলোর পাশাপাশি নতুন ব্যান্ডের প্রচার, প্রসারও দরকার। সুতরাং মিডিয়াসহ সবাইকে এবিষয়ে এগিয়ে আসার আহŸান জানাচ্ছি।
২৭ বছরে মোট ১৫টি একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছে দেশের অন্যতম নন্দিত ব্যান্ড এলআরবি। তাদের সর্বশেষ একক অ্যালবাম ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। এই দীর্ঘ সময় ধরে এলআরবি বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে শ্রোতাদের। তাদের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছেÑ ‘সেই তুমি’, ‘মাধবী’, ‘হকার’, ‘রূপালি গিটার’, ‘ফেরারী মন’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘নীল মলাট’, ‘অপরিচিতা’, ‘রাখে আল্লাহ মারেকে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘ভাঙা মন নিয়ে তুমি’, ‘যুদ্ধ’, ‘বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। এক সময় শ্রোতাদের মুখে মুখে ছিল গানগুলো। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘মাধবী’ ও ‘হকার’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল এলআরবি ব্যান্ডের ডাবল অ্যালবাম। অ্যালবামের গানগুলো শ্রোতাদের মনজয় করেছিল। তারপর তো ইতিহাস। এখন পর্যন্ত তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে এলআরবি ব্যান্ডের গানগুলো। ২৮ বছরে এসেও এব্যান্ডটি তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে শ্রোতাদের কাছে। দীর্ঘ এই ২৭ বছরের ভাঙা গড়ার খেলায় কান্ডারীর ভ‚মিকা পালন করছেন এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও লিড ভোকাল ও গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু। একক ক্যারিয়ারে সফলও তিনি। অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে তার একক কণ্ঠে। তবে কখনো একক ক্যারিয়ারকে ব্যান্ডের চেয়ে বড় করে দেখেননি এ মানুষটি। এ কারণেই তার নেতৃত্বে চলা এলআরবি ব্যান্ডটি এ প্রজন্মের ব্যান্ডগুলোর জন্য আদর্শও বটে। এখনো শ্রোতাদের ভালোবাসা নিয়ে দাপটের সঙ্গে স্টেজে অ্যালবামে গান করে চলেছে।
বর্তমানে প্রচুর মেধাবী ব্যান্ড দল আসছে, তারা কেমন করছে বলে আপনি মনে করেন?
এ প্রজন্মের জবাবে আইয়ুব বাচ্চু বলেন, এই কথাটি আমি বিশ্বাস করি। বর্তমানে আমাদের মধ্যে বেশ কিছু মেধাবী ব্যান্ড দল আছে। এরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
ছবি: হুমায়ূন কবির