Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

এখন অনেকে গানের সাথে গল্পও দেখতে চায়-বালাম

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বালাম। এক সময় দাপটের সঙ্গে সঙ্গীতঅঙ্গনে বিচরণ করেছেন। কিন্তু টেকনোলজির দ্রুত পরিবর্তনে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আসে পরিবর্তনের ঢেউ। তাতে সঙ্গীতাঙ্গনের অনেকেই ঝিমিয়ে পড়েন। সে দলে ছিলেন বালামও। এসময় তিনি দেশ-বিদেশে স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন কয়েকটি বছর। বের হয়নি তার কোনো অ্যালবাম। দীর্ঘ বিরতির পর গত বছর ফিরে আসেন মিউজিক ভিডিও নিয়ে। ভিডিওটি সাড়া ফেলে দর্শক-শ্রোতার মধ্যে। সম্প্রতি তিনি একটি গান প্রকাশ করেছেন। ফোক ঘরানার এ গানটিতেও বেশ সাড়া পেয়েছেন বালাম। এক বিকেলে বালাম আনন্দ আলোকে বলেছেন তার ফিরে আসার কারণ, বর্তমান ব্যস্ততা ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে নানা কথা। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

আনন্দ আলো: প্রথমে জানতে চাই মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়েছিলেন কেন?

বালাম: আমি আসলে কোনো প্ল্যান করে বিরতি নেইনি। আমার স্ত্রী অসুস্থ ছিল। কিছুদিন ভালো থাকে, আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে- এমনই চলছে দীর্ঘ সময়। হাসপাতালে বেশ দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে। এটা নিয়ে মানসিকভাবেও আমি অনেকটা ক্লানৱ হয়ে গিয়েছিলাম। যার ফলে গানের দিকে মনোনিবেশ করতে পারছিলাম না। ভালোলাগা থেকেই আমি গান করি। ভালো না লাগলে জোর করে হলেও করতেই হবে এমন না। আমার ভেতরে যখন ভালো কিছু আসে তখনই কোনো একটা গান করি, অ্যালবাম করি। তবে সময়টাতে একদম যে অফ ছিলাম তা নয়। দেশ-বিদেশে প্রচুর স্টেজ শো করেছি।

আনন্দ আলো: ফিরে আসার অনুপ্রেরণা কীভাবে পেলেন?

বালাম: অনুপ্রেরণা হিসেবে আমার পরিবার তো আছেই। আর তাপস ভাইয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গায় দেখা হলে তিনি বলতেন আবার গান করতে। আমার অনেক বন্ধু বলতো নতুন গান করতে। তাপস ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটা পার্টিতে দেখা হয়েছে আর তিনি বারবারই বলেছেন বালাম ভাই, আপনার ফিরে আসা দরকার। তখন নিজের ভেতরের স্পিডটা আবার বেড়ে যায়। এক সময় তিনি বললেন, আপনি একটা গান করেন আমি ওটার মিউজিক ভিডিও করি। এখন তো এটা একটা রীতিতে দাঁড়িয়ে গেছে, গানের সঙ্গে মিউজিক ভিডিও তৈরি করা। এরপরই আসলে বিরতির পর মেঘে ঢাকা মিউজিক ভিডিওটি করলাম।

আনন্দ আলো: মিউজিক ভিডিওটি কেমন সাড়া ফেলছে?

বালাম: গানবাংলা চ্যানেলে ভিডিওটি প্রচারের পর থেকেই দর্শক শ্রোতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। ভিডিওটি সব ধরনের শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন স্থানে গেলে গানটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখেই বুঝতে পারি।

আনন্দ আলো: নতুন কোনো অ্যালবামের কাজ করছেন কী?

বালাম: না। এখন আসলে আমার পরিকল্পনা একক গান নিয়েই। অ্যালবামের যে পপুলারিটি ছিল সেটা কমে গেছে। এক সময় আমাদের অ্যালবামের জন্য যে সম্মানী পেতাম, সত্যি বলতে এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। এটা কাজের প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়ার একটি কারণ।

আনন্দ আলো: এখন আর কেউ ১০/১২টি গান দিয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করছে না। একটি দুটি সিঙ্গেল করে প্রকাশ করছে। এব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

বালাম: গান তৈরি করার ক্ষেত্রে এখন যেটা মনে হয়, এক সঙ্গে ৮/১০টি গান করার চেয়ে দুই মাস বা তিন মাস পরপর একটা করে গান করলে সেটা সময়ের চাহিদার জন্য মানান সই। এতে করে মানসিক চাপ কম থাকে। গানগুলোও ভালো হয়। একসঙ্গে ১০টি গান করতে গেলে মানুষ ৩/৪টা গান পছন্দ করে শুনতে থাকে আর বাকিগুলো তেমন একটা শোনে না। এদিক থেকে একক গান করাটাই আমি পছন্দ করছি।

আনন্দ আলো: গানে আপনার নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করেছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন?

বালাম: সবাই বলে গানে আমার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। বিশেষ করে আমার হামিং। ছোটবেলা থেকে গান করার সময় গুন গুন করতাম। এটা একটা সময়ে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তারপরে এই অভ্যাসটাকে রিয়েল গানের ভেতরে শুরু করে দিলাম। গুনগুনের স্টাইলটা হচ্ছে আমার হামিং। প্রথম অ্যালবাম থেকে শুরু হলো আমার স্টাইলটা। আমার প্রায় গানেই হামিংটা চলে আসে। এখনতো এটা সিগনেচার হয়ে গেছে। ভক্তরা এটাকেই খুব পছন্দ করে।

আনন্দ আলো: অনেকেই বলেন, গান এখন ভিডিও নির্ভর হয়ে গেছে। আপনার অভিমত কী?

বালাম: গান শোনার পাশাপাশি গান দেখারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পছন্দের গানটিতে গল্প দেখাটা অনেকেই এনজয় করেন। গান জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে মিউজিক ভিডিওর একটা ভূমিকা থাকে। বাংলাদেশে এখন ভালো ভালো মিউজিক ভিডিও হচ্ছে। এটা আগে ছিল না। মডেলিংয়েও আমরা অনেক এগিয়েছি।

আনন্দ আলো: নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?

বালাম: যাদের সঙ্গে আমার কথা হয়, শেয়ারিং হয় তারা আমার কাছে অনেক কিছু জানতে চায়। তাদের মধ্যে শেখার ভীষণ রকম ইচ্ছা রয়েছে। তাদের ভালো ভাবে ইন্সট্রুমেন্ট বাজানো শিখতে হবে। তাদের কাজের মধ্যে অরিজিনালিটি থাকতে হবে। ভেতর থেকে যেটা ফিল করবে সেটাই করবে। গিটার, কি-বোর্ড ভালোভাবে শিখতে হবে।

আনন্দ আলো: এখন কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন ?

বালাম: গান নিয়ে শুধু ব্যস্ততা। বর্তমানে আমি নুতন গানের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। সঙ্গে প্র্যাকটিস আর স্টেজ শোতে রয়েছেই। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে লাইভ শো করে যাচ্ছি নিয়মিত।

আনন্দ আলো: আপনার ব্যান্ডের কী খবর?

balam-1বালাম: নিজের নাম দিয়েই চলছে ব্যান্ডের কার্যক্রম। বেজগিটারে আছেন সোহেল ভাই, ড্রামসে নাজিম, কীবোর্ডে বাপ্পি, ভায়োলিনে মুকুল, গিটার ও ভোকালে আমি নিজেই। এই লাইন আপ নিয়ে বালাম ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। আমার একক অ্যালবামগুলোই হচ্ছে আমার ব্যান্ডের অ্যালবাম। খুব শিগগিরই ব্যান্ডের একটা নতুন অ্যালবাম বের করার চিনৱা ভাবনা করছি।

আনন্দ আলো: অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখন কেমন মনে হচ্ছে?

বালাম: অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখন ভালোর দিকেই যাচ্ছে। গান প্রকাশের মাধ্যমে পরিবর্তন এসেছে। শ্রোতারা এখন ডিজিটাল গান শুনছেন। ইউটিউব এক্ষেত্রে বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মোবাইলেও গান মুক্তি পাচ্ছে। গানের পুরনো কোম্পানিগুলো ফিরছে। যার ফলে শিল্পী এবং কোম্পানির মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়গুলো ইতিবাচক।

আনন্দ আলো: আপনি গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন। আপনার বিনোদন কী?

বালাম: আমার বিনোদন হচ্ছে মুভি দেখা আর গান শোনা। খেলাধুলা করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস খেলতে পছন্দ করি।

আনন্দ আলো: আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?

বালাম: ভক্তদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা- আপনারাই আমাকে আজকের বালাম বানিয়েছেন। আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা সবসময়ই আছে। আশাকরি আপনাদের থেকে আর দূরে থাকব না। ভালো ভালো কাজ নিয়ে সবসময় আপনাদের সঙ্গেই থাকব।

আনন্দ আলো: সঙ্গীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

বালাম: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুধুই গান নিয়ে। ভালো কিছু গান শ্রোতাদের উপহার দিয়ে যাব।