Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ঈদের আয়না

ঈদ মানেই বছরের সেরা আনন্দ-বিনোদন মেতে ওঠার কাঙ্খিত মুর্হূত। ঈদ মানেই সাজ গোজ, খাওয়া-দাওয়া, হৈ হুল্লোড় আর টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালায় ডুব দেওয়া। কেমন হলো এবার ঈদের আনন্দ-বিনোদন। সেই সঙ্গে কেমন আছে আমাদের চলচ্চিত্র সহ সাংস্কৃতিক অঙ্গণ। বিস্তারিত থাকলো এই বিশেষ প্রতিবেদনে

একটা কথা ব্যাপক প্রচলিতÑ রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আমাদের চলচ্চিত্রের মানুষজন বোধকরি একটু বেশিই রেগে গিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্টি অপ্রীতিকর ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গন বলা যায় নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সবার মাঝে দেখে নিব… মনোভাব। বিশেষ করে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে বয়কট করার পর বিভিন্ন পক্ষের ‘দেখে নিব ভাব’ অশোভন মাত্রায় প্রকাশ হতে থাকে। অন্যদিকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কর্তৃক অব্যাহত ভাবে একাধিক পরিচালকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাও নোটিস জারির প্রেক্ষিতে যৌক্তিক এবং অযৌক্তিক ভাবেও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যার ফলে কাজের কাজ আসলে কিছুই হচ্ছিল না। নতুন ছবি নির্মাণ তো প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল।

আশার কথাÑ চলচ্চিত্রাঙ্গনের অস্থিরতা কিছুটা হলেও কমেছে। শাকিব খানকে ঘিরে সৃষ্টি জটিলতা দূর হয়েছে। পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমের খবরÑ শাকিব খান নিজে গিয়েছিলেন নায়ক ফারুকের বাসায়। তার কৃতকর্মের জন্য নায়ক ফারুকের কাছে মাফ চেয়েছেন। এ সময় চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরাও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র প্রযোজককে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার ঘটনারও একটি সন্তোষজনক ফয়সালা হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখন শুধু সাফল্যের বাতাসই বইবে।

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেনÑ এই কথাটিই আবার সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এতদিন আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এই যে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল সেটা হয়েছে অহেতুক রাগারাগির কারণে। শাকিব খান নায়ক ফারুককে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলেছেন। যা ছিল অশোভন কিন্তু তাই নিয়ে ফারুকসহ বড়রা ক্ষেপে গেলেন। ফলে হলো কী, উভয় পক্ষকে নানা ভাবে ক্ষেপিয়ে তোলার মানুষের অভাব হলো না। ফলে নবীন-প্রবীণের দ্ব›দ্বটাই প্রকট হয়ে উঠলো।

সেই শাকিব তো ঠিকই ফারুকের বাসায় গেলেন। মাফও চাইলেন। এই কাজটা যদি আগে করতেন তিনি তাহলে তো ঘটনার ডাল পালা আর জন্ম নেয় না। তবুও আমরা শাকিব খানকে শুভেচ্ছা জানাই। দেরিতে হলেও নায়ক ফারুকের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। প্রবীণের কাছে নবীনের ক্ষমা চাওয়াতে কোনো লজ্জাবোধ থাকা উচিত নয়। কারণ প্রবীণ পথ তৈরি করে দিয়েছেন বলেই নবীনরা সে পথে হাঁটতে পারছে। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে আমাদের একটি আবেদন আছে। যারা বলেন, এদেশের মানুষ চলচ্চিত্র দেখে না তারা ভুল বলেন। অজ্ঞাতনামা, আয়নাবাজিসহ সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রমাণ করেছে আমাদের দেশের মানুষ এখনও বিনোদন মানেই চলচ্চিত্রের কথা ভাবে। তবে দর্শক চলচ্চিত্রে নতুন কিছু দেখতে চায়। কাহিনী, অভিনয়, নির্মাণ শৈলী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রেই দর্শক আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির ফোকাস দেখতে চায়। এক্ষেত্রে আমরা চলচ্চিত্রের মানুষ জন কতটা প্রস্তুত? এখনও আমরা আমাদের চলচ্চিত্রের কারিগরি বিভিন্ন বিষয় সমাধান করার জন্য পাশের দেশে যাই। অন্যের সাহায্য নিয়ে মহৎ কিছু সৃষ্টি করা যায় না। মহৎ কিছু সৃষ্টি হলেও সেটা আমার বলে দাবি করা যায় না। বিষয়টির প্রতি সকলে গুরুত্ব দিবেন আশাকরি।

Natokচলচ্চিত্রের পরই আসে মঞ্চ নাটকের অবস্থান। আশার কথা এবার মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছরই ঈদে সিনেমা হল খোলা থাকে। টেলিভিশনে নতুন নতুন নাটক দেখানো হয়। পার্ক খোলা থাকে। শুধু খোলা থাকে না নাট্য মঞ্চ। তবে এবার ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ খোলা ছিল। বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের পরিকল্পনায় ও নির্দেশনায় ‘রিজওয়ান’ নামে একটি নতুন মঞ্চ নাটকের ১০ দিন ব্যাপি প্রদর্শনী হয়েছে। ঈদের দিনেও শিল্পকলার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকটি দেখার জন্য দর্শকের ভিড় ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় নাট বাঙলা ঈদ মঞ্চ নাটকের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছিল। আমাদের বিশ্বাস ঈদে মঞ্চ নাটক প্রদর্শনের এই যে নতুন ধারা চালু হলো আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। কথাতো ঠিকইÑ ঈদে সব খোলা থাকলেও মঞ্চ কেন খোলা থাকে না। এবার থেকে মঞ্চও খোলা থাকবে আশাকরি।

এবার টিভি নাটকের কথা বলি। আমাদের মাঝে সাধারণ ভাবে একটা ধারণা ছড়িয়ে দেয়া আছে তাহলো আমাদের টেলিভিশন নাটকের ভিউয়ার কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের টিভি নাটক দর্শক খুব একটা দেখে না। অথচ এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যারা বলেন আমাদের টিভি নাটকের দর্শক নাই তারা না জেনে না দেখে সেটা বলেন। বরং আমাদের টিভি নাটকের দর্শক সংখ্যা বেড়েছে। তবে হ্যাঁ এখানে ভালো নাটকের কথা বলা হচ্ছে। এবার ঈদে একটি টিভি চ্যানেলে ‘বড় ছেলে’ নামে একটি নাটক প্রচার হয়েছে। নাটকটি প্রচারের সময় হয়তো অনেকে তা দেখতে পাননি। কিন্তু প্রচারের পর পরই নানা মাধ্যমে নাটকটির প্রশংসা হতে থাকে। একজনের মুখ থেকে অন্যজনের মুখে নাটকটির নাম ছড়িয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নাটকটির নাম আলোচিত হতে থাকে। তার মানে ঘটনা কি দাঁড়ালÑ আমাদের টিভি নাটকের দর্শক বেড়েছে। তবে এক্ষেত্রে ‘ভালো’ শব্দটি যুক্ত করতে হবে। ভালো নাটক সেটা যে টিভি চ্যানেলেই প্রচার হোক না কেন মেধা থাকলে তা আলো ছড়াবেই। যেমন আলো ছড়িয়েছে বড়ছেলে।

যে যাই বলুক আসল কথাই হলো মেধা। নাটক, সিনেমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও মেধার দরকার। বিনোদন জগতে টিকতে হলে বর্তমান  সময়ের প্রেক্ষাপটে আধুনিক মনস্ক মেধার দ্যুতি দরকার। নাটক সিনেমায় পার্কের তথাকথিত প্রেম আর চলে না। পাল্টেছে প্রেম-ভালোবাসার ভাষাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও বিনোদন ব্যাপারটা অতিমাত্রায় এক্সক্লুসিভ হয়ে উঠেছে। সবাই নতুন কিছু চায়। আর তাই নতুনের সন্ধানে ছুটছে সবাই। তবে নতুন কিছু খুঁজতে গিয়ে আমরা যেন পুরনোকে ভুলে না যাই। নিজস্ব সংস্কৃতিকে যেন গুরুত্বহীন করে না তুলি। সবাই মিলে চলো এগিয়ে যাই।

আমরা কথায় কথায় সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ক’জনই বা এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করি। বিশেষ করে তারকাদের ব্যাপারে তাদের ভক্তদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। তারকাদেরকে তারা প্রেরণার উৎস হিসেবে দেখতে চায়। আমাদের চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমণি গত বছর থেকে একটি সামাজিক কর্তব্য পালনে উদ্যোগী হয়েছেন। চলচ্চিত্রের দুস্থ শিল্পীদের জন্য গত বছরের মতো এবারও তিনি গরু কোরবানীর ব্যবস্থা করেছেন। ঈদের দিন এফডিসিতে দুটি গরু কোরবানী দিয়েছেন পরীমণি। কোরবানীর গোশত দুস্থ শিল্পীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। পরীমনির এই উদ্যোগ অন্যের জন্য প্রেরণার উৎস হতে পারে। আমরা পরীমণিকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

ঈদে অনাবিল আনন্দ এনে দিয়েছিল আমাদের লড়াকু ক্রিকেটাররা। বিশ্ব ক্রিকেটের শক্তিধর প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট ক্রিকেটে হারিয়ে ঈদের আগেই দেশবাসীকে ঈদের আনন্দ উপহার দেয় মুশফিক, সাকিব, তামিম বাহিনী। ক্রিকেট পাগল দেশবাসীর জন্য এটি ছিল  ঈদের শ্রেষ্ঠ উপহার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবার সাউথ আফ্রিকার সাথে ক্রিকেট খেলতে সাউথ আফ্রিকা যাবে। সেখানে টেস্ট, ওয়ান ডে ও টি২০ ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই লড়াই হবে। বিশ্রামের কথা বলে দলে থাকছেন না বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এই নিয়ে দলে একটু হতাশা থাকলেও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সাউথ আফ্রিকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেক ভালো করবে।

টিভি নাটকের মতো এবারও বড় পর্দার প্রতি দর্শকের আগ্রহ ছিল। এবার ঈদে ৩টি নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছিল। দুটি ছবিরই নায়ক-নায়িকা ছিলেন নন্দিত নায়ক শাকিব খান ও আলোচিত চিত্রনায়িকা বুবলী। অন্য ছবিতে ডি এ তায়েবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন পপি ও পরীমণি। শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত দুটি ছবির ব্যাপারেই দর্শকের বেশ আগ্রহ ছিল। ডি এ তায়েবের ছবিটির ক্ষেত্রেও ঢাকার বাইরের দর্শকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

rangbazকেমন হলো বিভিন্ন চ্যানলে ঈদের অনুষ্ঠান? এমন প্রশ্নের উত্তর এবার বেশ সহজ হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে অধিকাংশ টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। চ্যানেল আইতে ফরিদুর রেজা সাগরের গোয়েন্দা সিরিজ ছোটকাকুর নতুন আয়োজন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নন্দিত নির্মাতা আফজাল হোসেনের পরিচালনায় ছোটকাকু এবার আরও বেশী আলো ছড়িয়েছে। প্রতিবারের মতো শাইখ সিরাজের কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠানটি এবারও দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়। চ্যানেল আই-এর এই আনন্দ আয়োজন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এটিএন বাংলা, দেশটিভি, মাছরাঙা, গাজী টেলিভিশন, আরটিভি, ৭১টিভি, চ্যানেল ২৪, যমুনা টেলিভিশন, এনটিভি, এটিএন নিউজ, দীপ্ত টেলিভিশন, ডিবিসি সহ দেশের প্রতিটি টেলিভিশনে ঈদের অনুষ্ঠানমালায় এবার বেশ চমক ছিল। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন এবার ঈদের অনুষ্ঠানমালায় বিরতিহীন নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচার করেছে। যা দর্শকের মাঝে স্বস্থির আমেজ এনে দিয়েছে।

ভালো কাজের স্বীকৃতি দরকার। এবার অনেক টিভি নাটকের ভীড়ে একদল তরুণ নাট্যকারের নাটক ব্যাপক জনপ্রিয় পেয়েছে। আমরা মনে করি নাটক গুলোর নির্মাতারা প্রশংসা পাবার যোগ্য।

বিগত কয়েক বছরের ঈদে নিয়মিতভাবেই মাসুদ সেজানের নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়ে আসছে। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবার মাসুদ সেজানের তিনটি ৭ পর্বের ঈদ ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হয়। সেগুলো হলো- এনটিভিতে ‘অ্যাবনরমাল’, একুশে টিভিতে ‘গরীব কেন কাঁদে’ ও বাংলাভিশনে ‘চরিত্র: নেতা’। এর মধ্যে ‘অ্যাবনরমাল’ ও ‘চরিত্র: নেতা’ নাটক দুটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানা গেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে অনেক দর্শকদেরই নাটক দুটির লিংক শেয়ার করতে দেখা গেছে। মাসুদ সেজান মূলত তার সব নাটক নিজেই লিখে থাকেন। তার নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, হাস্য-রসাত্মকের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তার নাটকে সমাজের নানা অসঙ্গতি তিনি তুলে ধরেন।

এবারের ঈদে সাগর জাহানের তিনটি ৭ পর্বের ঈদ ধারাবাহিক ও একটি খÐ নাটক প্রচারিত হয়েছে। এগুলো হলো- আরটিভিতে খÐ নাটক ‘মাখন মিয়ার উদার বউটা’, ধারাবাহিক নাটক ‘মাহিনের অনেক সাধের ঘড়ি’, বাংলাভিশনে ধারাবাহিক নাটক ‘মেরিড লাইফ-এ অ্যাভারেজ আসলাম’ ও এনটিভিতে ‘নবাবের প্রেম’। ধারাবাহিক তিনটির মধ্যে দুটি হলো সিক্যুয়াল। গত ঈদে প্রচারিত ‘মাহিনের নীল তোয়ালে’ ও ‘অ্যাভারেজ আসলাম ইজ নট এ ব্যাচেলর’ ধারাবাহিক দুটির সিক্যুয়ালই মূলত ‘মাহিনের অনেক সাধের ঘড়ি’ ও ‘মেরিড লাইফ-এ অ্যাভারেজ আসলাম।’ সিক্যুয়াল এই দুটি ধারাবাহিকেরই মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। ফলে মোশাররফ ভক্তরা হাস্য-রসাত্মক এই নাটক দুটি উপভোগ করেছেন। আর অন্য দুটি নাটকের মূল চরিত্রে ছিলেন জাহিদ হাসান ও তিশা।

চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে জিটিভিতে প্রচারিত ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ নাটকটি দিয়ে দর্শক-সমালোচকদের নজর কাড়েন সাফায়েত মনসুর রানা। তার নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সব নাটকই তিনি নিজেই লেখেন ও অধিকাংশ নাটকে অভিনয়ও করেন। ফলে নির্মাতার পাশাপাশি ভালো একজন লেখক ও অভিনেতা হিসেবেও সাফায়েত মনসুর রানা এখন মিডিয়াতে বেশ পরিচিত মুখ। এবারের ঈদে সেই ধারাবাহিকতায় বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি। সেগুলো হলো- জিটিভিতে ‘চার সপ্তাহ’, এনটিভিতে ‘আমরা ফিরবো কবে’ ও আরটিভিতে ‘ক্যাফে ৯৯৯’। এই তিনটি নাটকই বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। সাফায়েত মনসুর রানা জানান, তিনটি নাটকই তিন ধরনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে। ফলে দর্শকের কাছে কোনটিই যাতে একঘেঁয়ে না লাগে সেজন্য তিনি সচেষ্ট থেকেছেন। প্রচলিত ধারার প্রেম-ভালোবাসার বাইরেও যে নাটক নির্মাণ করা সম্ভব সেটিই তিনি করে থাকেন। আর এবারের তিনটি নাটকেও সেটি বজায় রাখার চেষ্টা তিনি করেছেন। ইতোমধ্যে ফেসবুক আর ইউটিউবে নাটক তিনটি নিয়ে দর্শকরা তাদের ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। মানুষজন নাটকগুলোর লিংক শেয়ার করছেন। এটিই বোধহয় একজন নির্মাতার জন্য বড় সার্থকতা জায়গা।

মিজানুর রহমান আরিয়ান: এবারের ঈদে তরুণ লেখক ও নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ানের ৫টি নাটক-টেলিফিল্ম বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। সেগুলো হলো- চ্যানেল নাইনে ‘বড় ছেলে’, এনটিভিতে ‘ব্যাচ ২৭- দ্য লাস্ট পেজ’, বাংলাভিশনে ‘চেয়েছি তোমায়’, জিটিভিতে ‘বলা হলো না’ এবং এটিএন বাংলায় ‘ইচ্ছে তাই’। এর মধ্যে মিজানুর রহমান আরিয়ানের নিজের লেখা ও নির্দেশনায় ‘বড় ছেলে’ ও ‘ব্যাচ ২৭- দ্য লাস্ট পেজ’ ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘বড় ছেলে’ টেলিফিল্মটির মূল প্রাণই হলো এর অসাধারণ স্ক্রিপ্ট। টেলিফিল্মটিতে অপূর্ব ও মেহজাবিন দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ইউটিউবে সিডি চয়েসের নিজস্ব চ্যানেলে আপলোডের মাত্র ৪ দিনেই এটির ভিউ বর্তমানে প্রায় কোটির ঘরে। আর ফেসবুকে নাটকটি নিয়ে নানান জনের নানান মন্তব্য দেখে বোঝা যায় এই টেলিফিল্মটিকে ঘিরে সাধারণ দর্শকের আগ্রহ কি পরিমাণ। আর ‘ব্যাচ ২৭- দ্য লাস্ট পেজ’ টেলিফিল্মটি মূলত গত ঈদে এনটিভিতে প্রচার হওয়া ‘ব্যাচ ২৭’ টেলিফিল্মের সিক্যুয়াল। এটিও দর্শকরা বেশ পছন্দ করেছেন বলে আরিয়ান জানিয়েছেন। গত ঈদুল ফিতরেও বিভিন্ন চ্যানেলে আরিয়ানের ৫টি নাটক-টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছিল।

Porimoniঈদে জিটিভিতে প্রচারিত হয় নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পুত্র নুহাশ হুমায়ূন নির্মিত প্রথম নাটক ‘হোটেল আলবাট্রোস’। নাটকটি নুহাশ হুমায়ূনের নিজের লেখা। নাটকটির গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি হোটেলে থাকা কয়েকজন শেফকে নিয়ে। প্রথম নাটকেই দর্শক মন জয় করতে পেরেছেন নুহাশ হুমায়ূন। দর্শকরা তার কাজ পছন্দ করেছেন। ঈদের আগেই যখন মিডিয়াতে সংবাদ এলো যে, নুহাশ হুমায়ূনের প্রথম কাজ এবারের ঈদে আসবে তখন থেকেই অনেকে তার কাজ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন। তবে তাদের নুহাশ হতাশ করেননি। বরং নতুন এ নির্মাতার গল্পের বুনন আর নির্মাণশৈলীর প্রশংসাই ঝরেছে অনেক দর্শকের কণ্ঠে। নুহাশের প্রথম নাটকেই কাজ করেছেন তার বাবা হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকের নিয়মিত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। তরুণ নির্মাতা নুহাশের ব্যাপারে অভিনেতা ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘নুহাশ এ সময়ের নির্মাতা। এ নাটকের গল্পে সে তার নিজস্ব ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছে। সে কীভাবে কাজ করতে চায়, এ সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। নির্মাতা হিসেবে এটা খুবই প্রয়োজন।’ হোটেল আলবাট্রোস দেখে দর্শকের প্রত্যাশা যে বেড়েছে অনেকখানি, সেটা বলাবাহুল্য। এ জন্য দর্শকরা আগামীতে তার কাছ থেকে আরো ভালো ভালো নাটক পাবে সেই আশা তো করতেই পারে।

এনটিভিতে এবারের ঈদ আয়োজনের ৭ম ও শেষ দিনে প্রচারিত হয় জামিল আশরাফ খান নয়নের রচনা ও পরিচালনায় খÐ নাটক ‘ভালোবাসার সম্পাদকীয়।’ এটি জামিলের দ্বিতীয় নাটক। এর আগে তিনি বানিয়েছিলেন ‘শেষ দৃশ্যের আগে’। ‘ভালোবাসার সম্পাদকীয়’ নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জন কবির ও শার্লিন। নাটকে জন কবির একজন সাংবাদিক ও শার্লিন তার প্রেমিকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সাংবাদিকদের বাস্তব জীবনকে নির্মাতা তার নাটকে তুলে ধরেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আপনজনও যে পর হয়ে যায় সেটি নাটকে দেখা যায়।

এবার নির্মাতা আবু হায়াত মাহমুদ বেশকিছু ভিন্নধর্মী কাজ নিয়ে দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। ‘সোনার মানুষ’, ‘ভাঙ্গন’, ‘বখতিয়ারের বাইক’, ‘প্রশ্ন’, ‘লাভটোমিটার’, ‘স্বপ্ন অথবা পতঙ্গ’, ‘রূপালি দিপালী’ ও ‘যাদুর বাক্স’ নাটকগুলোর প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা গল্প। এরমধ্যে ‘ভাঙ্গন’ নাটকটি নিয়ে ফেসবুকে বেশ আলোচনা দেখা গেছে। একটা চরের মানুষের জীবন সংগ্রাম আর টানাপোড়নের গল্প ছিল এটি।

এছাড়াও ময়ূখ বারীর পরিচালনায় মাছরাঙা চ্যানেলে প্রচার হওয়া ‘উচ্চতর হিসাববিজ্ঞান’, হাসান মোরশেদ পরিচালিত বৈশাখী টেলিভিশনের ‘মায়া’ বেশ প্রশংসিত হয়।

আরো রয়েছে মাহমুদ দিদারের পরিচালনায় চ্যানেল আইতে প্রচার হওয়া ‘না জাগতিক না পুরান’ আলোচিত নাটক। একই চ্যানেলে রাজিব হাসানের ‘শ্যামদেশের সুন্দরবন’, তানিয়া আহমেদের ‘ছায়া’, হিমেল আশরাফের ‘প্রাপক প্রিয় পরী’ আলোচিত হয়।