Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমার ধৈর্য্য দেখে আমি নিজেই অবাক হই!-জয়া আহসান

আনন্দ আলো: এবার ঈদ কেমন কাটলো?
জয়া আহসান: ঈদ আমার সবসময়ই ভালো কাটে। অনেকেই বলে থাকেন ছোটবেলার তুলনায় বড়বেলায় ঈদের সৌন্দর্য তেমন থাকে না। অনেকটাই ¤øান হয়ে যায়। কিন্তু আমার বেলায় সেটা হয়না। ঈদের দিন সকাল বেলাতেই আমার ভেতরে অন্যরকম অনুভ‚তি কাজ করতে থাকে। সত্যি বলতে কী আমি ঈদে কেমন জানি একটা সুখের আমেজ পাই। যা আমাকে বেশ আনন্দ দিয়ে থাকে।
আনন্দ আলো: দেশে আপনার অভিনীত এবং প্রযোজিত মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘দেবী’ সিনেমাটি রয়েছে। এনিয়ে কিছু জানতে চাই।
জয়া আহসান: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ নিয়ে আমার মনের মধ্যে ভালো লাগার বীজ বপন হয়েছিল সেই ছোটবেলায়। স্কুলে পড়ার সময়ই উপন্যাসটি পড়ি। তখনই কেমন জানি একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। উপন্যাসটিকে ঘিরে মনের মধ্যে তখনই একটা দাগ কেটে গিয়েছিল। পরবর্তীতে যখন থেকে অভিনয় শুরু করি তখন হঠাৎ হঠাৎই উপন্যাসটির বিশেষ একটা চরিত্রের কথা মনে পড়তো। মনে মনে ভাবতাম এমন একটি চরিত্র কী আমি কখনোই পাবো না? অনেক বছর পরে যখন ছবিটি করার সিদ্ধান্ত নেই তখন অনেকবার চিন্তা করেছি এই চরিত্রটি নিয়ে কেউ সিনেমা বানায়নি কেন? তখন আমার বার বার মনে হয়েছে উপন্যাসটি নিয়ে আসলে একটি সিনেমা হতে পারে এটাও হয়তো কেউ ভাবেনি। সত্যি কথা বলতে কী, এটা নিয়ে আমার মধ্যে একটা লোভ ছিলো। সেই লোভ থেকেই আমার ছবিটিতে অভিনয় করা এবং প্রযোজনায় যুক্ত হওয়া। ছবিটি অনুদানের টাকায় নির্মিত হয়েছে। এটি আমার প্রযোজনা হাউজ থেকে নির্মিত। যদিও অনুদানের পরও ছবিটিতে আরো বাজেট লেগেছে।
আনন্দ আলো: আপনি ‘দেবী’ সিনেমায় রানু চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন। উপন্যাসের রানু আর সিনেমার রানুর মধ্যে কী কোনো পার্থক্য রয়েছে?
জয়া আহসান: দেখুন, কোনো উপন্যাসের গল্প নিয়ে যখন সিনেমা বানানো হয় তখন অনেক কিছুই সেলুলয়েডে আনা সম্ভব হয় না। আমরা যতোটুকু বাদ দিলে কিংবা সংযোজন করলে কোনো সমস্যা হবে না ততটুকু নিয়েই কাজ করেছি। একেবারে সাহিত্যের মতো করেই যদি সিনেমা বানানো হয় তাহলেতো হবেনা। কারণ দুটি ভিন্ন মাধ্যম। তাই এইটুকু লিবার্টি আছে। তবে আমার চরিত্রটির যে গভীরতা এবং মাধুর্যতা তা অবশ্যই বজায় রাখা হয়েছে দর্শক দেখলেই তা বুঝতে পারবেন।
আনন্দ আলো: এই সিনেমার একটি শক্তিশালী চরিত্র হচ্ছে মিসির আলী। অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। মিসির আরী ও চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে একটু বলবেন…
জয়া আহসান: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সৃষ্টি মিসির আলী। এই চরিত্রটি টিভি নাটকের পর্দায় অনেকবার এসেছে। এর আগে যারাই নির্মাণ করেছেন এতো সুন্দর ও অনবদ্য ভাবে নির্মাণ হয়েছে যে, এটা আমাদের জন্যও কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। আর তাই তো আমরা ‘দেবী’ চলচ্চিত্রে মিসির আলী চরিত্রটিকে ইচ্ছে করেই একটু অন্যভাবে এনেছি। চরিত্রটি চঞ্চল চৌধুরী অসধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে চরিত্রের মূল জায়গাটা উপন্যাসের মতোই আছে। শুধুমাত্র উপস্থাপনাটা একটু অন্যরকম হয়েছে। চঞ্চল অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ছবিটি দেখার পর দর্শক তা বুঝতে পারবেন আশাকরি।
আনন্দ আলো: এই সিনেমার প্রযোজনায় দায়িত্বও পালন করেছেন। সবকিছু একসাথে সামলালেন কিভাবে?
জয়া আহসান: এখনো শেষ হয়নি সব সামলানো। এখনও অনেককিছু সামলাতে হচ্ছে। এটা একটা অনগোয়িং প্রসেস। সবকিছু সামলানোর জন্য আমার টিমটাকে ধন্যবাদ অবশ্যই দিতে হবে। কারণ এই টিমটা না থাকলে এতো চ্যালেঞ্জি এবং এতো কষ্টদায়ক একটা কাজ করা সম্ভব হতো না। সবার সাপোর্টটা না থাকলে অভিনয় করা এবং প্রোডিউস করা দুটো কাজ কোনোভাবেই করা যেতো না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিনেমা প্রোডিউস করা অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। তবে আমি খুব উপভোগ করছি।
আনন্দ আলো: কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে আপনার অভিনীত নতুন সিনেমা ‘ক্রিসক্রস’। যেখানে আপনাকে মিসেস সেন এর চরিত্রে দেখা গেছে….
জয়া আহসান: এই ছবিটি হচ্ছে পাঁচটি লড়াকু মেয়ের গল্প। সেখানে আমি একটি চরিত্র মিসেস সেন। এই মেয়েটি প্রতিষ্ঠিত একজন নারী। কিন্তু তার একাকিত্ব রয়েছে। এই সময়ের সাথে মিল খাওয়া একটি চরিত্র এটি। আমাদের আশপাশে এরকম অনেক চরিত্র রয়েছে। এরকম পাঁচটি মেয়ের চরিত্র নিয়েই ছবিটি নির্মিত হয়েছে। বেশ সাড়া পেয়েছি ছবিটির ব্যাপারে।
Joyaআনন্দ আলো: একটি সিনেমার জন্য প্রচার ও প্রচারনায় একজন অভিনয় শিল্পীর অংশগ্রহণ করার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে?
জয়া আহসান: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি ওপার বাংলার যতগুলো সিনেমা করেছি প্রত্যেকটিতেই মুক্তির সময় প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। দেশেরও কয়েকটি সিনেমা মুক্তির সময় আলাদাভাবে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছি। এতে করে দর্শকদের সাথে আলাদা একটা যোগসূত্র তৈরি হয়। এই জিনিসটা কলকাতায় বেশি পেয়েছি। আমাদের এখানে শিল্পীরা ডাবিং পর্যন্ত ছবিতে যুক্ত থাকেন। এরপর আর থাকতে চান না। এটা অবশ্যই একটা রং কনসেপ্ট। তবে আমি ‘দেবী’ সিনেমার ক্ষেত্রে চেষ্টা করছি অনেকাংশে সকল শিল্পীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিতে। এমনকি আমাদের সিনেমার প্রচারের স্টাইলটাও একটু ভিন্ন হবে। আমরা ফুডপান্ডার সাথে আছি, ইস্পাহানি চা-এর সাথে আছি। আছি বিশ্বরঙের সাথেও। নানানভাবে আসলে ছবিটির প্রচার চালানোর চেষ্টা করছি। তবে আমাদের এখানে সিনেমার ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম ব্যাপারটা এখনও তেমন গুরুত্ব পায়নি। ফলে নানান ঝামেলা হয় কাজের ক্ষেত্রে। সেই জায়গা থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সামনে আরো প্ল্যান আছে প্রচার-প্রচারনার ব্যাপারে।
আনন্দ আলো: দেবী ছাড়া আপনার মুক্তি প্রতিক্ষীত ছবিগুলোর নাম কি?
জয়া আহসান: কিছুদিন আগে কলকাতায় মুক্তি পেলো ‘ক্রিসক্রস’। এর আগে মুক্তি পেলো ‘বিসর্জন’। সামনে দেশে মুক্তি পাবে ‘দেবী’। আর কলকাতায় পুজার সময় মুক্তি পাবে কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি ‘বিজয়া’। আরো আছে ‘এক যে ছিলো রাজা’,‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, ‘কণ্ঠ’, ‘ঝড়াপালক’। আর দেশে মুক্তির প্রতীক্ষায় আছে ‘বিউটি সার্কাস’ সহ কিছু নতুন ছবি।
আনন্দ আলো: আপনি একসময় রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর ডিপ্লোমা করেছিলেন। ক্লাসিক্যাল মিউজিকের উপর তালিমও নিয়েছেন। সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ সম্পর্কে বলবেনÑ
জয়া আহসান: একসময় আমার ধারণা ছিলো আমি মনে হয় সঙ্গীতের দিকেই ঝুকবো। কিন্তু ফাইনালি কেনো জানি হলো না। তবে আমি সঙ্গীতের খুব ভালো রকমের একজন শ্রোতা। রাগ সঙ্গীতের ভীষণ ভক্ত। আমি খুব ভালো গাইতে পারতাম কিনা জানি না। তবে ঐসময় যখন গাইতাম তখন অনেকেই বলেছিল ভালো গাই। পরবর্তীতে কোনো অ্যালবাম কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে গান গাওয়া হয়নি।
আনন্দ আলো: আপনার পেইন্টিংয়ের উপরও দুর্বলতা আছে…
জয়া আহসান: হ্যাঁ, দুর্বলতা আছে। তবে এখন আর আঁকা হয়না। এখন কেউ আমাকে পেয়ারা আঁকতে দিলে জাম্বুরা হয়ে যাবে হা… হা… হা…। তবে একসময় আমি অনেক ছবিও এঁকেছিলাম। জাতীয় জাদুঘরে একটি একক এক্সিবিশনও হয়েছিল। আমি ঐসময় ওয়াটার কালার, অয়েল কালার, উড কাঠ সহ অনেক ধরনের পেইন্টিং-ই করেছি।
আনন্দ আলো: আপনার সফলতার পেছনে কোন জিনিসটি বেশি কাজ করেছে?
জয়া আহসান: আমার ধৈর্য্যই আমাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমি কতুটুকু সফল কিংবা কতোটা ভালো অভিনয় করতে পারি সেটা জানি না। তবে আমি কখনোই কোনো কিছুতে হতাশ হইনি। আমি একটা বিশ্বাস নিয়ে ছিলাম সবসময় তা হলো একদিন আমি ঠিকই কিছু একটা করতে পারবো। আমি খুব মেধাবী অভিনয় শিল্পী না। দুই ধরনের অভিনয় শিল্পী রয়েছে। কেউ থাকেন জন্মসূত্রে মেধাবী অভিনয় শিল্পী হয়ে যান। আবার কেউ থাকেন ঘষে মেঝে আস্তে আস্তে শিখে থাকেন। আমি বোধহয় দ্বিতীয় দলের মধ্যে পড়ি। আমি কখনোই কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়া করিনি। খুব দৌঁড়াইনি। আমি সবসময় প্যাশনস রেখেই কাজ করেছি। সেটা আসলে অভিনয় বলেই নয় যেকোনো কাজই আমি খুব যতœ নিয়ে ধীরে সুস্থে করতে পছন্দ করি। তবে এটা ঠিক যে আমার ধৈর্য্য বেশি, আমি নিজেই মাঝেমধ্যে অবাক হয়ে যাই আমার ধৈর্য্য দেখে। আমার মায়ের এই ভালো গুনটি হয়তো কিছুটা পেয়েছি।
আনন্দ আলো: আপনি একই সাথে কলকাতা এবং নিজ দেশে দুটো ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। আপনার কী মনে হয়, তাদের থেকে আমরা পিছিয়ে আছি?
জয়া আহসান: দেখুন, পিছিয়ে আছি এটা আমার কাছে এক অর্থে ঠিক মনে হয়না। আমাদের আর ওদের মধ্যে কাজের প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে সময়টা একটা ব্যাপার। আমাদের শুরু হওয়ার পর মাঝে যে সময়টা গেছে সেটার জন্য অনেক কিছুই দায়ী। মাঝে আমাদের এখানে অশ্লীল সিনেমার যে জোয়ার ছিলো এবং আমাদের এখানে একটা ক্রান্তিকাল গেছে বলা যায়। আবার তাদের যে প্র্যাকটিসটা শুরু থেকে ছিলো, সেটার ধারাবাহিকতা এখনো আছে। তবে হ্যাঁ বাজার মন্দার সময়টা সবারই ছিলো। তারপরও আমাদের আর তাদের মধ্যে সামাজিক বিষয়, কনজারভেটিব মানসিকতা, প্রেক্ষাগৃহে মানুষ যাওয়া সবমিলিয়ে একটা পার্থক্য তো আছেই। তারপরেও কিছু মানুষ আছেন যারা সিনেমায় একটা চেইঞ্জ এনেছেন। যারা কিনা আরবানদের জন্য সিনেমা বানানো, সিনেপ্লেক্সে দর্শক নেয়া সবমিলিয়ে এগিয়ে আছেন। আর আমাদের এখানেও আরবানদের জন্য সিনেমা, সিনেপ্লেক্স সব প্র্যাকটিসই একটু পরে শুরু হয়েছে। আমাদের এখানে এখন যে ধরনের সিনেমা হয়, যেটাকে আমরা আর্ট ঘরানার সিনেমা বলিÑ এই দর্শক অনেক পরে আমাদের তৈরি হচ্ছে। আরো অনেক বিষয় রয়েছে। ওদের ওখানে এখনো রবিবার হলেই হলে গিয়ে সিনেমা দেখার কালচার আছে, আমাদের এখানে একসময় ছুটির দিনে সবাই হলে গেলেও এখন কিন্তু সেই অভ্যাসটা নেই। সবমিলিয়ে আমরা এগুচ্ছি ঠিকই তবে গেম চেইঞ্জ করে দেয়ার মতো জায়গায় যেতে হয়তো আরো সময় লাগবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি বানানো এবং মুক্তি দেয়া পর্যন্ত অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়। পথটা স্মুথ না। এই জায়গাগুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অনেক কিছুই আমাদের বদলাবে না।
আনন্দ আলো: আপনার নিজস্ব সময়গুলো কেমন?
জয়া আহসান: আমি একা একা সময় কাটাতে খুব ভালোবাসি। এই সময়টাতে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। নিজের ভেতর কোনো সিদ্ধান্ত লুকিয়ে থাকলেও এই সময়টাতে আমি সলিউশন খুঁজে পাই। এর পাশাপাশি আমি মুভি দেখি, গান শুনি এবং বই পড়ি। যদিও অবসর খুব একটা পাই না। তারপরও আমি চেষ্টা করি নিজেকে সময় দিতে। না হলে কাজে স্পৃহা পাইনা। তাই নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করে নিজেকে হালকা করি।