Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আমার আছে দুইজন হুমায়ূন -মেহের আফরোজ শাওন

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এমনি সময়ে আমরা একদিন মেহের আফরোজ শাওনের মুখোমুখি হই। তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়েছিল আনন্দ আলোর নবম বর্ষের প্রথম সংখ্যায়।

যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়…। সত্যি কী মন কাঁদে? বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চ্যানেল আই-এর একটি অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ শাওনকে দেখা গেল মঞ্চে। পেছনে বড় পর্দায় বাংলা সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের একটার পর একটা ছবি দেখানো হচ্ছিল। যদি মন কাঁদে তবে চলে এসো… এই গানের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ছবি। শাওন যতক্ষণ মঞ্চে ছিলেন ততক্ষণ হুমায়ূন আহমেদের ছবির দিকেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন। দর্শককে আড়াল করে কাঁদছিলেন তিনি। শব্দহীন কান্না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বিশাল মিলনায়তনে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শকের মাঝেও এই কান্নার শব্দ ছুঁয়ে যায়। অজানেত্ম চোখের পানি মোছেন কেউ কেউ। তার মানে সত্যি সত্যি মন কাঁদে?

আমাদের বাংলা সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টি করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনিই আমাদের একুশে বইমেলাকে উজ্জ্বল করেছেন। এবারের বইমেলায় অন্যপ্রকাশের স্টলের মাথায় হুমায়ূন আহমেদের একটি বড় ছবি রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন অসংখ্য পাঠক সেই ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতেন। একদিন এক তরুণ তাকিয়েছিল ছবিটার দিকে। ধোপ-দুরসত্ম পোশাক। চোখে চশমা। মায়াভরা মুখ। একবার মনে হচ্ছিল ছেলেটি কী হিমু? পরক্ষণেই মনে হলো না হিমু না। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই আপনার নাম? অপরিচিত একজন মানুষকে প্রশ্ন করতে দেখে প্রথমে একটু যেন ‘ভ্যাবাচেকা’ খেলো সেই তরুণ। তবে পরক্ষণেই বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিল। নিজের নাম বলল।

জিজ্ঞেস করলাম- হুমায়ূন আহমেদের ছবিটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছেন। আপনার কেউ হন?

তরুণ এবার সন্দেহভরা চোখে আমার দিকে তাকাল। যেন প্রশ্নটা করে আমি বড় অন্যায় করেছি। তরুণ বলল- না, হুমায়ূন আহমেদ আমার কেউ না। তবে তিনিই আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। জানেন, আমার কেন যেন এখনো বিশ্বাস হয় না হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে নেই। প্রায় প্রতিদিনই মেলায় আসি। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি? বারবার মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন। একটু পরেই বইমেলায় আসবেন। বসবেন অন্যপ্রকাশের স্টলে। সারামেলায় হৈচৈ পড়ে যাবে। অন্যপ্রকাশের কর্মীরা পাঠকের ভিড় সামলাতে ব্যসত্ম হয়ে উঠবেন। ওই তো হুমায়ূন আহমেদ আসছেন… বলেই তরুণ দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল।

এই যদি হয় পাঠকের অবস্থা তাহলে লেখকের পরিবারের অবস্থা কী? প্রিয়তমা স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তার দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে কেমন আছেন? মূলত এই কৌতূহল থেকেই শাওনের সাথে যোগাযোগ করি আমরা। এক সন্ধ্যায় আমরা হাজির হই ধানমন্ডির হুমায়ূন আহমেদের বাসায়।

না, নিয়মের এতটুকু ব্যতিক্রম হয়নি। আগের নিয়মই বহাল আছে। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে যে নিয়ম ছিল বাসার দরোজা সব সময়ই খোলা থাকত। সেই নিয়মেই বাসার দরোজা খোলা আছে। কলিং বেল বাজাতে হলো না। তবে বাসার ভেতর ঢুকে আমার ভেতরে একটা শূন্যতা জেঁকে বসল।

বহুবার এসেছি এই বাসায়। প্রতিবারই হুমায়ূন আহমেদের সাথে কোনো না কোনো কাজ ছিল। শাওন সংসারের কাজের ফাঁকে উঁকি মেরে হয়তো দেখতেন। প্রশ্ন করতেন- কেমন আছেন? মাথা নেড়ে বলতাম- ভালো আছি। আজ হুমায়ূন আহমেদ নেই। কথা বলতে এসেছি শাওনের সাথে। শাওন একটু ব্যসত্ম। ফোনে কথা বলছেন হুমায়ূন আহমেদের লেখার ঘরে বসে। এই ঘরেই হুমায়ুন আহমেদের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে ফিরে যাবেন। আনন্দ আলোর পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিলাম। হুমায়ূন আহমেদ বসেছিলেন তার লেখার ঘরে। সেদিন কত কথাই না বলেছিলেন বাংলা সাহিত্যের জাদুকর। সুস্থ হয়ে ফিরে এসে কী কী করবেন তারই একটি স্বপ্নময় জগৎ এঁকেছিলেন আমাদের সামনে।

শাওন আমাদেরকে দেখেছেন। তবুও ফোনে কথা বলেই যাচ্ছেন। ছোট ছেলে নিনিত কয়েকবার তার কাছে গেল। মায়ের কাছে কী যেন আবদার করছে নিনিত। মা শাওন বারবার ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বোঝাতে চাইছেন- হবে বাবা হবে যাও… আমি আসছি।

একসময় ফোনে কথা শেষ করে শাওন চলে গেলেন ভেতরের ঘরে। কয়েক মিনিট পর আমাদের সামনে এলেন। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এতক্ষণ কেঁদেছেন। এখনো কাঁদছেন। তবে নিজেকে আড়াল করতে চাইছেন। আমরা সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্বে যেতে চাইলাম। কিন্তু কী প্রশ্ন করব শাওনকে? কেমন আছেন- দিয়েই কী শুরু হবে প্রশ্নোত্তর পর্ব? ব্যাপারটা হাসপাতালে রোগী দেখতে গিয়ে প্রশ্ন করার মতো হয়ে যাচ্ছে না তো? শাওন কেমন আছেন তাকি একটু অনুভব করলেই বোঝা যাবে না? বাংলা সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী তিনি। স্বামী বেঁচে থাকতে তার জগৎটা ছিল একরকম। এখন বোধকরি অন্যরকম। প্রায় অবুঝ দুই সনত্মান আর হুমায়ূন আহমেদের বিশাল চলচ্চিত্রকর্ম ও সাহিত্যের জগৎ আর নুহাশ পল্লীর দেখভাল করা নিয়েই কী তার সময় কাটছে? তাহলে শিল্পী শাওনের ভবিষ্যৎ কী? গায়িকা শাওন? নৃত্যশিল্পী শাওনের ইতিহাস কী এখানেই শেষ?

নিনিত মায়ের কাছে আবারো কী যেন এক আবদার নিয়ে এসেছে। মাকে জড়িয়ে ধরে আধো আধো বোলে তা বোঝানোর চেষ্টা করছে। শাওন ছেলের কপালে চুমু দিয়ে বোঝাতে চাইলেন- বাবা আমি এখন একটা জরুরি বিষয় নিয়ে কথা বলছি। তুমি যাও… পরে তোমার কথা শুনব। লক্ষ্মী বাপ আমার… নিনিত মায়ের গলা জড়িয়ে ধরেই আছে। ছাড়ছে না। আদুরে গলায় কী যেন বোঝাতে চাইছে মাকে। কাজের মেয়েটি এসে নিনিতকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাশের ঘরে নিয়ে গেল।

শাওন নিজেই প্রসঙ্গ তুললেন। বললেন- মাঝে মাঝে অনেকেই প্রশ্ন করেন আমি কেমন আছি? এই যে দেখেন আমি কেমন আছি? হুমায়ূন আহমেদ আমাকে দুটি সনত্মান দিয়ে গেছেন। যারা আমাকে সারাক্ষণ আদর-সোহাগে ব্যসত্ম রাখে। বড়টা হয়েছে ওর বাবার মতো। কম কথা বলে। কিন্তু দারুণ বুদ্ধি। মাঝে মাঝে আমাকে এমনসব প্রশ্ন করে তখন আমি অবাক হয়ে যাই। ভাবি হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকলে ছেলের মুখে বুদ্ধিদীপ্ত সব প্রশ্ন শুনে যারপরনাই অবাক হতেন। বাবা যে পৃথিবীতে নেই বড় ছেলে তা বুঝতে পারে। তবে ছোটটা এখনো বিশ্বাস করে তার বাবা বেঁচে আছে। হয়তো হুট করে বাসায় এসে সবাইকে অবাক করে দেবে। সারাদিন দুই ছেলেকে নিয়ে ব্যসত্ম থাকি। ওরা আমাকে একটুও মন খারাপ করতে দেয় না। বিশেষ করে নিষাদ যেন সারাক্ষণই আমাকে হাসিমুখে দেখতে চায়। নিনিতের আবদার বেশি। সকাল থেকে সন্ধ্যা… একটু রাত অবধি ছেলেদের নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দারুণ ব্যসত্ম সময় কাটে আমার। তবে রাত যত বাড়ে আমি ততই একা হয়ে যাই। হুমায়ূন আহমেদ আমার জীবনে এত ভালো স্মৃতি রেখে গেছেন যে, আমি নিজেকে অনেক সময় সামলাতে পারি না। কত স্মৃতি! কত ঘটনা। সবই আনন্দের… বলেই কেঁদে ফেললেন শাওন। তার দুই চোখে বাধভাঙ্গা জোয়ার। দুই হাতে চোখ মুছছেন। তবুও জল থামছে না। চোখ মুছছেন আবার কাঁদছেন। একসময় নিজেকে সামলে নিলেন। স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বললেন- সরি ভাই। আমরা কথা শুরু করি।

বর্তমানে কী করছেন? প্রশ্ন শুনেই শাওন বললেন- বাবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হয়েছি। তেজগাঁওয়ে অফিস। যদিও আমার কাজের ধারার সাথে বাবার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধারা একরকম নয়। তবুও নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। বাবার অনুরোধ ফেলতে পারিনি। আমার মায়ের একটি পত্রিকা আছে। সেখানেও মাঝে মাঝে সময় দিচ্ছি।

অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণের ব্যাপারে কোনো খবর আছে কী? প্রশ্ন শুনে শাওন একটু যেন ভাবলেন। তারপর মৃদু হেসে বললেন- আপাতত অভিনয়ের কথা ভাবছি না। আর নির্মাণের কথা বলছেন? সেটাও সম্ভব নয়। আসল কথা হলো যখনই অভিনয় এবং নির্মাণের কথা ভাবি তখনই হুমায়ূন আহমেদের কথা মনে পড়ে। তাকে ছাড়া কীভাবে সম্ভব? না, আপাতত অভিনয় ও নির্মাণের কথা ভাবছি না। বলতে বলতে আবারো আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠলেন শাওন। বললেন- হুমায়ূন আহমেদ আমার জীবনে এতটাই আনন্দ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া কিছু করার কথা ভাবতে পারি না। অনেকের এখনো অনেক কৌতূহল। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল কীভাবে? এটা নিয়েও কৌতূহল আছে! হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার পরিচয়ের তিনটি ঘটনার কথা বলি। প্রথম ঘটনা। আমার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের দারুণ ভক্ত। আমি তখন ছোট। স্কুলে পড়ি। ভাইকে দেখতাম হুমায়ূন আহমেদের নতুন কোনো উপন্যাস প্রকাশ হওয়ামাত্রই কিনে আনত। তারপর বিশেষ কায়দায় সাদা অথবা রঙিন কাগজ দিয়ে বইয়ের মলাট ঢেকে দিত। যাতে বইটা নষ্ট না হয়। ঘটনা আরো আছে। বইগুলো উন্মুক্ত জায়গায় রাখত না বড় ভাই। যাতে তার বই কেউ পড়তে না পারে এমন সতর্কতায় লুকিয়ে রাখত টেবিলের ড্রয়ারে। এজন্য আমার কৌতূহল বেড়ে গেল। ভাই কার লেখা বই এত মনোযোগ দিয়ে পড়ে? একদিন ভাই বাসায় নেই। অতি সনত্মর্পণে ড্রয়ার থেকে একটা বই বের করলাম। লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ। কী এমন লেখেন তিনি? কৌতূহল মেটাতে বইখানা পড়া শুরু করলাম। প্রায় একবসায় বইখানি পড়া শেষ করে লেখকের প্রতি আমি যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছি। উপন্যাসের নায়িকাকে মেরে ফেলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার এখানেই আপত্তি। নায়িকা মারা যাবে কেন? তারপর থেকে আমার আর কোনো আগ্রহ নেই হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ার প্রতি।

Shawon-1Shawon-1হঠাৎ একদিন বিটিভিতে হুমায়ূন আহমেদের সাথে সরাসরি দেখা হয়ে গেল। হুমায়ূন আহমেদ ‘জননী’ নামে একটি ডকুমেন্টারী ফিল্মের জন্য নতুন মেয়েকে খুঁজছেন। আলা উদ্দিন আহমেদ আমার খোঁজ দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদকে। আমাকে হুমায়ূন আহমেদের সামনে হাজির করা হলো। এই প্রথম সরাসরি হুমায়ূন আহমেদকে দেখলাম। হুমায়ূন আহমেদ আমার হাতে একটি স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দিয়ে পড়তে বললেন। আমি পড়লাম। হুমায়ূন আহমেদ খুশি হয়ে বললেন- পাস। এই মেয়েকে দিয়ে হবে। জড়িয়ে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের নাটকে। তারপরের ঘটনা কমবেশি সকলেই জানেন। স্ত্রী হিসেবে বলব হুমায়ূন আহমেদ আদর পেতে পছন্দ করতেন। যদি মনে করতেন কেউ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তাহলে কষ্ট পেতেন। সরে যেতেন তার কাছ থেকে। এ ধরনের ঘটনায় স্ত্রী হিসেবে আমি সবসময় তাকে যথাসাধ্য পজিটিভ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সাহস জুগিয়েছি। হুমায়ূন আহমেদের জীবনে তার বন্ধুদের ভূমিকাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।

বন্ধুত্বের কথা উঠতেই একটা জরুরি প্রসঙ্গ তুলে শাওনকে প্রশ্ন করি- এবার একুশে বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের ওপর লেখা ২৫টির মতো বই প্রকাশ হয়েছে। হুমায়ুন আহমেদের অনেক বন্ধু বই লিখেছেন। এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? উত্তর দিতে গিয়ে শাওন একটু আগে টেলিফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার প্রসঙ্গটি তুললেন। শাওন বললেন- রেজা ভাই, খেয়াল করেছেন বোধহয় আপনারা আসার পরও আমি ফোনে কথা বলছিলাম। নিউইয়র্কে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। আসল ঘটনা আপনাকে খুলেই বলি। নিউইয়র্কে মুক্তধারা নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মালিক বিশ্বজিৎ সাহা হুমায়ূন আহমেদের ওপর একটি বই লিখেছেন। বইটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই বইয়ের অধিকাংশ তথ্য ভুল। বইটিতে বিশ্বজিৎ সাহা নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা এবং তার পরিবারকে ঘিরে কিছু উদ্ভট ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। যা সত্যি দুঃখজনক।

শাওন বললেন- আমি একথা বলছি না হুমায়ূন আহমেদের ওপর কেউ বই লিখতে পারবেন না। কিন্তু বইটি কে লিখছেন? কেন লিখছেন? সেটাই বোধকরি প্রশ্নের বিষয়। হুমায়ূন আহমেদের ওপর তার মা, ভাইবোন, ছেলে-মেয়ে বই লেখার অধিকার রাখেন। বন্ধুরাও তার ওপর বই লিখতে পারেন। কিন্তু তা হতে হবে সঠিক তথ্যসমৃদ্ধ। হুমায়ূন আহমেদ ও তার পরিবারকে ঘিরে মনগড়া কাহিনির বই লেখার অধিকার কেউ রাখেন না। যদি কেউ লেখেন তাহলে বড় অপরাধ করবেন। আশাকরি লেখককে ভালোবাসেন বলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করবেন না।

কথায় কথায় নিষাদ নিনিতের প্রসঙ্গ চলে আসে। নিষাদ একটি নামকরা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে। নিনিতকে এখনো স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। নুহাশ নিষাদ-নিনিতের বড় ভাই। দেখা হয় কী পরস্পরের সাথে? প্রশ্ন শুনে শাওন একটু ভাবলেন। তারপর বললেন- নিষাদের সাথে নুহাশের অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিল। ওদের দুজনের চমৎকার কিছু স্মৃতিময় ছবিও আছে। দুই ভাইয়ের আনন্দময় সময়ের ছবি। নুহাশ একবার বিদেশ থেকে নিষাদের জন্য একটা পুতুল কাকড়া উপহার হিসেবে এনেছিল।

বোনদের সাথে কী নিষাদ-নিনিতের যোগাযোগ আছে? প্রশ্ন শুনে শাওন যেন একটু চমকালেন। বিষণ্ন মনে বললেন- না, বোনদের সাথে তাদের কখনো দেখা হয়নি।

নুহাশ পল্লীর খবর কী? প্রশ্ন তুলতেই শাওন বললেন- নতুন কোনো খবর নেই। হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকতে নুহাশ পল্লী যে নিয়মে চলেছে এখনো সেই নিয়মে চলছে। আমার শাশুড়ি এ ব্যাপারে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

এরপর অনেক কথা হলো শাওনের সাথে। সবই হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরে। একসময় তাকে প্রশ্ন করলাম- আচ্ছা শাওন, আপনি কী পরজন্মে বিশ্বাস করেন?

শাওন মৃদু হেসে বললেন- আমাদের ধর্ম পরজন্ম মানে না। আমিও পরজন্মে বিশ্বাস করি না। তবুও যদি পরজন্মের ব্যাপারটা থাকত তাহলে আমি আবার হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রীই হতে চাইতাম। কারণ হুমায়ূন আহমেদের মতো ভালো মনের মানুষের স্ত্রী হতে পারাটা বড়ই সৌভাগ্যের। হুমায়ূন আহমেদ নেই। মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। তিনি আমার জীবনে এত ভালো স্মৃতি রেখে গেছেন যে, মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু যখন আমার দুই শিশুপুত্র আদরের নিষাদ আর নিনিত আমার পাশে এসে দাঁড়ায় তখন মনে হয় কে বলেছে হুমায়ূন নেই? ওই তো আমার পাশে দুইজন হুমায়ূন আহমেদ দাঁড়িয়ে আছে। নিষাদ আর নিনিত মেধা ও মননে বাবাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছে। আমার নিষাদ, আমার নিনিত। আমারই হুমায়ূন… বলেই আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন শাওন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় সারাক্ষণই পাশে ছিলেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলামের স্ত্রী স্বর্ণা। হুমায়ূন আহমেদ যাকে দ্বিতীয় ‘মা’ বলে সম্মোধন করতেন। সাক্ষাৎকারের শেষে শাওন যখন কাঁদছিলেন তখন স্বর্ণাও কাঁদছেন। মনে হচ্ছিল সেই গানটিই যেন শুনতে পাচ্ছি- যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো…