Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অনেক সাজলাম সেটাই গ্ল্যামার নয়! -আঁখি আলমগীর

ছোটবেলা থেকে গানের জম্পেশ আবহে আঁখির বেড়ে ওঠা। হাতের নাগালে পেয়েছেন সঙ্গীতে সুর-তাল-লয়ের সবকিছুই। গানে আঁখির শুরুটা প্লেব্যাক দিয়ে। প্রথম একক অ্যালবাম ‘প্রথম কলি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। দ্বিতীয় একক ‘বিষের কাঁটা’ অ্যালবামের ‘পিরিতি বিষের কাটা বিধলো আমার গায়’ গানটি দিয়ে শ্রোতাপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন। সেই শিশুশিল্পী থেকে আজকের আঁখি গানের প্রাণবন্ত। চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তবে কোনো নায়িকার চরিত্রে নয়। গায়িকা হিসেবে হাজির হয়েছেন। শিশুশিল্পী হিসেবে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘ভাত দে’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। অসাধারণ অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছিলেন। কিছুদিন আগে গানে বিশেষ অবদানের জন্য কলকাতায় মৈত্রী সম্মাননা পেয়েছেন। গান নিয়ে তার ভাবনা, অনুভূতি, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ নানা বিষয়ে আনন্দ আলো অফিসে কথা হয় তার সঙ্গে। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক।

আনন্দ আলো: বর্তমানে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে?

আঁখি আলমগীর: গান নিয়েই আমার ব্যস্ততা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গান বিষয়ক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করছি। অডিও অ্যালবামের কাজ করছি। দেশ-বিদেশে স্টেজ প্রোগ্রাম করছি নিয়মিত। এছাড়া চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করছি।

আনন্দ আলো: সম্প্রতি কি কি কাজ করলেন?

আঁখি আলমগীর: ‘ফাল্গুনের কৃষ্ণচূড়া’ শিরোনামের একটি গান করেছি। কবির বকুলের কথায় গানটির সুর ও সঙ্গীত করেছেন শওকত আলী ইমন। গানটির মিউজিক ভিডিও করা হচ্ছে। এর বাইরে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কিশোরের সুর ও সঙ্গীতে নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছি। এখনো নতুন গান নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে।

আনন্দ আলো: প্রজেক্ট আঁখি আলমগীর অ্যালবামটি সম্পর্কে বলুন।

আঁখি আলমগীর: আমি অনেক হ্যাপি যে আসিফের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি দীর্ঘদিন পরে। এ প্রজেক্ট নিয়ে আমি অনেক আশাবাদীও বটে। আসিফ শিল্পী হিসেবে যেমন আমার অনেক প্রিয়, তেমনি মানুষ হিসেবেও। কারণ সাহসী প্রতিবাদী ভাষা সে জানে। এ অ্যালবামে আমার একক গান ছাড়াও থাকবে আসিফের সঙ্গে বেশ কিছু দ্বৈত গান। তার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে আসিফের সঙ্গে ‘বেসামাল মন’ গানটি। এ গানটির কথা, সুর ও সঙ্গীত করেছেন শ্রী প্রীতম। শ্রোতামহলে গানটির বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। আসিফের এন্টারটেইনমেন্ট থেকে প্রকাশ পেতে যাচ্ছে প্রজেক্ট আঁখি আলমগীর অ্যালবামটি।

আনন্দ আলো: দীর্ঘদিন ধরে একটি নজরুল সঙ্গীতের অ্যালবামের কাজ শুরু করবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করে আসছেন। সেটার কী খবর।

আঁখি আলমগীর: নজরুল সঙ্গীতের প্রতি শৈশব থেকেই আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন মঞ্চে শ্রোতাদের অনুরোধে নজরুলগীতি পরিবেশনও করেছি। কিন্তু কখনো অ্যালবামের জন্য গান গাইনি। মৌলিক গানের নতুন এককের পর কাজটা শুরু করতে যাচ্ছি। তাই একসঙ্গে দুটি অ্যালবামের কাজ করাটা উচিত হবে না। তাছাড়া নজরুল সঙ্গীতের অ্যালবামের কাজ করতে গেলে অনেক শ্রম, সাধনার পাশাপাশি আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িয়ে পড়ে। তাই এই মুহূর্তে সব কিছু চিনৱা করে এর কাজ থেকে আপাতত বিরত রয়েছি। তবে সঠিক সময়ে এর কাজ ঠিকই শুরু করব।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গানের কী খবর?

আঁখি আলমগীর: স্টেজ শোর পাশাপাশি চলচ্চিত্রে গান গাইতে আমি বেশি আনন্দ পাই। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু ছবিতে প্লেব্যাক করেছি। সম্প্রতি ‘পাগল বাড়ির প্রেম’ ছবিতে মনির খানের সঙ্গে একটি দ্বৈত গানে কণ্ঠ দিয়েছি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ছবিতে প্লেব্যাক করার কথা চলছে। আপাতত নতুন গান নিয়ে ব্যস্ত আছি।

আনন্দ আলো: এখন গান শুধু শোনার নয়, দেখারও বিষয়। সে ক্ষেত্রে গানের কোয়ালিটির সঙ্গে গ্ল্যামার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আঁখি আলমগীর: খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি অনেক সাজলাম সেটাই কিন্তু গ্ল্যামার নয়। গানের কথা, পরিবেশ এ সবের সঙ্গে মিলিয়ে অভিব্যক্তিটাও এক ধরনের গ্ল্যামার। একটা জিনিস খুব সুন্দরভাবে দৃশ্যায়ন হলে মানুষের মনে একেবারে গেঁথে যায়। সুতরাং এই ডিজিটাল যুগে এসে গানের কোয়ালিটির সঙ্গে গ্ল্যামারসও থাকতে হবে।

আনন্দ আলো: কয়েকদিন আগে আপনি কলকাতায় মৈত্রী সম্মাননা পান। এটা নিয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

আঁখি আলমগীর: এই সম্মাননা দুই বাংলার গুণী মানুষদের দেয়া হয়। এটা সাধারণত কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদদের বেশি দেয়া হয়। দুএকবার শিল্পীরা পেয়েছেন। এবার সেই ধারাবাহিকতায় আমি পেলাম। আমার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করলে তারপর আমি সম্মতি দেই। আমার হাতে পুরস্কার তুলে দেন কলকাতার পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সংস্কৃতিমনা মানুষ তিনি। আমার বেশ কিছু সিডি তাকে উপহার দিয়েছি। আমি নায়ক আলমগীরের মেয়ে সেটা তিনি জানতেন না। পরে তাকে বলেছি। সবার আতিথেয়তা ভালো লেগেছে।

আনন্দ আলো: দীর্ঘদিন সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। আপনার প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সম্পর্কে কিছু বলুন?

আঁখি আলমগীর: গান গেয়ে মানুষের অনেক ভালোবাসা, সম্মান পেয়েছি। এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?  প্রাপ্তির জায়গায় অপ্রাপ্তি এতটাই কম সেটা বলার প্রয়োজন মনে করছি না। যখন ফিল্মে গান গাইব গাইব করেছি তখন আমাদের বাসায় প্রায়ই ঘরোয়া ভাবে গানের আসর বসতো। যেখানে প্রায়ই সৈয়দ আব্দুল হাদী আঙ্কেল, সুবীর নন্দী আঙ্কেলরা আসতেন। আমার মা যেহেতু গান লিখতেন, বাবা অনেক গানপ্রিয় একজন মানুষ। একসঙ্গে বসে গান হত। এমন এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সুবীর আঙ্কেলকে বাবা বললেন, আমার মেয়ের গান শোনেন, যদি মনে হয় আমার মেয়ে গান গাইতে পারে, গান গাইবার যোগ্য মনে হয় তাহলে ওকে গান গাইতে দেব। যদি না হয় তাহলে দেব না। এখনতো স্কুলে পড়ে, কলেজে উঠলে গান গাইতে দেব। একটা পুরনো গান গেয়েছিলাম সেদিন। আমার গান শুনে সুবীর আঙ্কেল বললেন, আপনি কলেজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? ততদিনে তো একটা ভালো শিল্পীকে দেশ হারাবে।

বড় বড় শিল্পীদের উৎসাহ অনেক বড় পাওয়া। শ্রদ্ধেয় শাহনাজ রহমতউল্লাহ ছোটবেলায় আমার গান শুনে বলেছিলেন, ওর তো এখনই প্রফেশনালি গান গাওয়া উচিত। আমি বলেছিলাম শখে গান করি। বড় হয়ে আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা। গানতো শখে করেছি। তিনি বলেছিলেন, তুমি গান প্রফেশনালি করতে না চাইলে গানই তোমাকে ডেকে নেবে।

আনন্দ আলো: খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীরের কন্যা আপনি। মা খোশনূর একজন স্বনামখ্যাত গীতিকবি। এটা কি বাড়তি একটা চাপ ছিল?

akhi-alamgir-1আঁখি আলমগীর: অবশ্যই বাড়তি একটা চাপ ছিল। এই চাপের মধ্যে এখনো রয়েছি। একটা বিষয় দেখবেন যারা অনেক বড় স্টারের ছেলে-মেয়ে অন্যরা ভাবে তাদের জন্য সবকিছু খুব সহজ। আলমগীরের মেয়ে হিসেবে মিডিয়ার মানুষ হয়তো আমাকে সবাই চিনে। একবার হয়তো সেই পরিচয়ে সুযোগ দিলেন। বারবার কিন্তু সুযোগ দেবেন না। প্রতিনিয়ত তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই তুলনা করাটা ঠিক নয়। কেন না তারা হলেন লিজেন্ড। তাদের সঙ্গে তুলনা চলে না, কিন্তু তুলনা চলে আসে। এটা আসবে বলেই বড় হয়ে কখনো সিনেমায় নায়িকা হতে চাইনি। এই কারণে নিজের একটা ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছি।

আনন্দ আলো: তাহলে এটা কী পরিবারের চাপের কারণে?

আঁখি আলমগীর: কোনো চাপের কারণে নয়। ছোটবেলায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। এটা ১৯৮৪ সালের কথা। তখন সবাই ভেবে নিয়েছিল আমি অভিনেত্রী হব। কিন্তু গানতো শিখেছি আরো ছোটবেলা থেকে। আব্বুর কোনো চাপ ছিল না। যেটা করতে চেয়েছি, বেছে নিতে চেয়েছি সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন। সিনেমায় অনেক বেশি অফার ছিল। সুযোগ ছিল। সবার ধারণাও ছিল নায়িকা হব। বিএ পাস করে ল’ পড়তে ঢুকে গেলাম। পরে সেটা আর শেষ করা হয়নি। আসলে সবদিক দিয়ে গানটাই আমার জন্য ভালো। এখন এসে বুঝি গান বেছে নেয়াটাই আমার জন্য পজেটিভ হয়েছে।

আনন্দ আলো: শোবিজে আপনার উত্থানের পেছনে বাবার অবদান কতটুকু?

আঁখি আলমগীর: আমরা দুই বোন এক ভাই। আমি সবার বড়। সেদিক থেকে বাবার সঙ্গে এক অদৃশ্য বন্ধন অনুভব করি সব সময়। মজার বিষয় হচ্ছে, এতবড় হয়েছি। দুই সনৱানের মা হয়েছি তবুও বাবার কাছে যেন এখনো সেই ছোট্টটি আছি। আমি গান করি এটা বাবা সব সময় চাইতেন। কিন্তু গানকে প্রফেশন হিসেবে নেই সেটা চাইতেন না। আমার গানের অনেক বড় সমালোচক তিনি। ভুল হলেও ধরিয়ে দিতেন। খুব বন্ধুত্বপরায়ণ। বাবা অনেক বড় তারকা। সব সময় তার ব্যস্ততা ছিল। তবু অবসর পেলে আমাদেরকে নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতেন। এ কারণে ছেলেবেলাতেই অনেক দেশ ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছিল। ছুটির দিনে বাবা আমার গান শুনতেন। হারমোনিয়ামে বসে কত যে গান শুনাতাম।

আনন্দ আলো: আপনার মা একজন খ্যাতিমান গীতিকবি। তার লেখা গানগুলো নিয়ে অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা আছে কী?

আঁখি আলমগীর: মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পীরা যারা মায়ের গানগুলো গেয়েছেন, তাদের সেই হিট গানগুলো নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা করছি।

আনন্দ আলো: একসময় ১০-১২টি গান দিয়ে অ্যালবাম সাজানো হত। কিন্তু আজকাল একটি গান দিয়েও অ্যালবাম বের করছেন কেউ কেউ। এসব মিনি অ্যালবাম নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

আঁখি আলমগীর: মিনি অ্যালবামের ব্যাপারটা সময়ের প্রয়োজনেই চলে এসেছে। শ্রোতাদের কথা বিবেচনা করলে ব্যাপারটা অবশ্যই ভালো নয়। কারণ অ্যালবামে প্রিয় শিল্পীর যত বেশি গান থাকে শ্রোতারা ততই খুশি হয়। বেশি গানের মধ্য থেকে পছন্দের গানটি যেমন খুঁজে নিতে পারে, তেমনি বিভিন্ন রকমের গান শোনারও সুযোগ পায়। কিন্তু শিল্পীর কথা চিনৱা করলে বিষয়টি আরো কষ্টের। একটি অ্যালবাম প্রকাশ করতে গেলে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা উঠে আসে না। তার ওপর একটি গান প্রচার করতে গেলে মিউজিক ভিডিও করতে হয়। ভিডিওর ব্যয়ও অনেক। সব মিলিয়ে বাধ্য হয়েই সিঙ্গল ট্র্যাক বা কম গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। এই সিস্টেমের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

আনন্দ আলো: আপনি একজন কণ্ঠশিল্পী, উপস্থাপিকা, অভিনয় শিল্পী এবং মডেল। নিজেকে কোন্‌ পরিচয়ে বেশি প্রাধান্য দিবেন?

আঁখি আলমগীর: আমি যেহেতু গানের শিল্পী তাই আমার প্রথম পরিচয় একজন সঙ্গীত শিল্পী। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে শ্রোতারা আমাকে প্রথমে ভালোবাসে। অভিনয় তেমন একটা করি না। হয়তো আমার গানে আমি অভিনয় করেছি। মায়ানগর এবং এককাপ চা ছবি দুটিতে অভিনয় করেছি। এটাকে অভিনয় বলা যায় না। আর মডেলিংটা আমি খুবই এনজয় করছি। মডেলিং করতে ভীষণ ভালো লাগে। বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও ভক্তরা আমাকে গ্রহণ করেছে। এখন বলা যায় দর্শক শ্রোতারা দুটোতেই আমাকে গ্রহণ করেছে এবং তাদের ভালোবাসায় আমি এগিয়ে যাচ্ছি।

আনন্দ আলো: সিনেমায় অডিওর চেয়ে স্টেজ শো নিয়ে আপনাকে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কেন?

আঁখি আলমগীর: আমি গত ২০ বছর ধরেই স্টেজে একই গতিতে পারফর্ম করছি। এখন হয়তো প্রচার মাধ্যম বেশি, তাই প্রকাশ পাচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ফেসবুক রয়েছে। আগেতো এতসব কিছু প্রকাশ হত না। এখন বিভিন্ন স্থানে স্টেজ শো করতে গেলে ফেসবুকে ছবি দেই। তাই মানুষও বেশি জানছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে স্টেজে কাজ করে আমি দর্শকশ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা অমূল্য। এটা ভাগ্যবানদের ক্ষেত্রেই হয়। এভাবেই যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন স্টেজে গান করে যেতে চাই।

আনন্দ আলো: বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন যাচ্ছে বলে মনে হয়?

আঁখি আলমগীর: এখন অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালোর দিকে যাচ্ছে। কারণ গান থেকে আয়ের অনেক মাধ্যম তৈরি হয়েছে। এখনতো ইউটিউব থেকেও আয় আসছে। আমার মনে হয় সামনে অবস্থা আরো ভালোর দিকে যাবে।

আনন্দ আলো: এই সময়ের গান আপনার কেমন লাগে?

akhi-alamgir-2আঁখি আলমগীর: তরুণরা অনেক ভালো করছে। অনেক ভালো ভালো শিল্পী দেখছি। আমি মনে করি মেধাবীদের সুযোগ তৈরি করার দায়িত্ব সবার। তবে অন্যের গান গাওয়ার চেয়ে নিজের মৌলিক গানের উপর জোর দিতে হবে বেশি। একজন শিল্পীর বড় অর্জন হচ্ছে তার মৌলিক গান। অন্যের গান কাভার করাটা দোষের কিছু নয়। তবে আগে মৌলিক গানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ মৌলিক গান শিল্পীর নিজস্বতা বহন করে।

আনন্দ আলো: অনেকেই গানে পাশ্চাত্যের ধারা অনুকরণ করে। একজন আধুনিক শিল্পী হিসেবে আপনি কোন্‌ ধরনের গান গাইতে পছন্দ করেন?

আঁখি আলমগীর: শুধুমাত্র পাশ্চাত্য নয়, কোনো দেশের সঙ্গীতের ভালো কিছু গ্রহণ করা যেতে পারে। উচ্চারণ বিকৃত করলে ভালো লাগে না। শুনতে খারাপ লাগে। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি দেশীয় ঐতিহ্যকে লালন করেই গান গাইতে চাই। সেটা রোমান্টিক, ফোক, আধুনিক যে কোনো ধরনের হতে পারে।

আনন্দ আলো: অনেক কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এখনো বেঁচে আছেন। কিন্তু কেউ কেউ তাদেরই গান করছেন টেলিভিশনে। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে অভিযোগ শোনা যায়।

আঁখি আলমগীর: বড় কণ্ঠশিল্পীদের গান গাওয়াটাও কিন্তু একটা প্র্যাকটিস। তাদের গান গেয়ে আমরা বড় হচ্ছি। তাদের গান গাওয়াটা শেখার মধ্যে পড়ে। যারা তাদের গান করছে এদের সবার গানই যে খারাপ হচ্ছে সেটা কিন্তু না। অনেকে খুবই ভালো করছে। তারা যাদের গান গাইছে তারা যদি অভিযোগ না করে থাকে তাহলে এনিয়ে আলোচনার কী আছে? যে শিল্পী নিজের গানই খারাপ গায়, সে অন্যের গান কীভাবে ভালো গাইবে। আমারও কিন্তু ইচ্ছে করে কালজয়ী গানগুলো গাইতে। তাদের গায়কীর কাছে আমাদের গায়কী শিশুসুলভ হয়ে যাবে। তবে আমি মনে করি কালজয়ী গানগুলো একটু শিখে, জেনে গাইলে ভালো হয়। তাহলে মানুষ ভুলটা ধরতে পারবে না।

আনন্দ আলো: নিজের গাওয়া কোন গানগুলো প্রিয়?

আঁখি আলমগীর: আমার গাওয়া সব গানই প্রিয়। কোন্‌টা ছেড়ে কোন্‌টা বলব। আমার প্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘আমি চাই না তোমায় হারাতে’, প্রণব ঘোষের সুরে এসডি রুবেলের সঙ্গে ডুয়েট। ‘বোকামন’, ‘স্তব্ধতার গান’, ‘শ্যাম পিরিতি’, কী জাদু কী মায়া ইত্যাদি। এছাড়া শ্রোতাপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পিরিতি বিষের কাঁটা’, ‘বন্ধু আমার রসিয়া’, ‘জলপড়ে পাতা নড়ে’, ‘শ্যাম পিরিতি আমার অন্তরে’, ‘জোরকা ঝাটকা লাগে ধীরে’, ‘মেঘের পালকে নয়’, ‘তুমি যে আমার কত যে আপন’, ‘এত ছোট জীবন নিয়া জগতে আসিয়া’ প্রভৃতি।

আনন্দ আলো: গান ছাড়া আপনি আর যা ভালো করতে পারেন?

আঁখি আলমগীর: পছন্দের কথা বলছেন তো? সবাই বলে আমি নাকি অনেক ভালো রান্না করি। যে কোনো রান্না ভালো করতে পারি। এটা সবাই বলে। পোলাউ, রোস্ট ভালো রান্না করতে পারি। প্রিয়জনকে রান্না করে খাওয়াতে আমার খুব ভালো লাগে।

আনন্দ আলো: আপনার ফ্যাশনটা কী?

আঁখি আলমগীর: আমি ফ্যাশন সচেতন। কিন্তু ফ্যাশন ফলো করি না। আমি নিজে ফ্যাশন ক্রিয়েট করি। যেটাতে নিজেকে মানাবে, কমফরটেবল, বয়সের সঙ্গে যায়, কোথাও যাব অর্থাৎ স্থান কাল পাত্র জেনে মানানসই কিছু পরাটাই আমার কাছে ফ্যাশন। সেটা আমার শাড়ি খুব পছন্দ। আমার হাইট ভালো, শাড়িটা বেশ মানায়।

আনন্দ আলো: আপনি গান দিয়ে সবাইকে বিনোদিত করেন। আপনার নিজের বিনোদন কী?

আঁখি আলমগীর: আমার বিনোদন গান শোনা, সিনেমা দেখা আর শপিং করা।

আনন্দ আলো: আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন?

আঁখি আলমগীর: স্বামীর নাম ফায়রাজ আলতাফ। আমার দুই মেয়ে স্নেহা ও অরিয়া। এদের নিয়ে আমার পরিবার। আর যারা আমাকে ভালোবেসে আমার গান শোনে তারাও আমার পরিবারের একটা অংশ হয়ে যায়।

আনন্দ আলো: অবসর সময় কীভাবে কাটান।

আঁখি আলমগীর: আমি অবসর সময় বই পড়ি। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা মিস করি। থ্রিলার টাইপের সিনেমা দেখি। গান শোনা হয় প্রচুর। আমার প্রিয় শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর।

আনন্দ আলো: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আঁখি আলমগীর: মরণের আগ পর্যন্ত ভালো কিছু গান গেয়ে যেতে চাই। এটাই আমার পরিকল্পনা।