Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অনেক সাজলাম সেটাই কিন্তু গ্ল্যামার নয়! : রিজিয়া পারভীন

জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রিজিয়া পারভীন।  ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গানে সমান তালে ব্যস্ত সময় পার করেছেন তিনি।  চলচ্চিত্রে তার কণ্ঠে বেশ কিচু গান শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে।  পাশাপাশি অডিও অ্যালবামে গানের মধ্য দিয়েও শ্রোতামহলে প্রশংসিত হয়েছেন এ শিল্পী।  তবে রিজিয়া পারভীন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত দেশ-বিদেশের স্টেজ শো নিয়েই।  স্টেজ পারফরমেন্সের মাধ্যমে শ্রোতা মাতাতে জুড়ি নেই এ শিল্পীর।  বর্তমানে নতুন গান ও স্টেজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।  আধুনিক, ক্লাসিক্যাল এবং লোকগীতিসহ সব ধরনের গানের এক উজ্জ্বল তারকা রিজিয়া পারভীনের সঙ্গে কথা হয় সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় তার নিজস্ব বাসভবনে বসে।  নিচে তারই চুম্বক অংশ লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

আনন্দ আলো: সঙ্গীত জীবনের ২৫ বছর পার করলেন।  আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

রিজিয়া পারভীন: ২৫ বছর ধরে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করছি গান পাগল মানুষদের প্রতি।  যাদের ভালোবাসা না পেলে ২৫টি বছর গান বাজনা করা সম্ভব হতো না।  দেখতে দেখতে কখন যে ২৫ বছর চলে গেল ভাবতেই অবাক লাগছে।

আনন্দ আলো: সঙ্গীতের দীর্ঘ পথচলায় শ্র্রোতাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

রিজিয়া পারভীন: প্রত্যাশার কথা যদি বলতেই হয় তাহলে চেষ্টা করেছি।  কিছুটা হয়তো সফল হয়েছি বলে এখনো গান গাইতে পারছি।  আমার অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  আমি মনে করি এর ক্রেডিডটা গীতিকার ও সুরকারদেরও।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গান অর্থাৎ প্লেব্যাক শুরু হয় কীভাবে?

রিজিয়া পারভীন: শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরই রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হই।  তারপর বিভিন্ন স্টেজ শোতে গান গাইতে শুরু করি।  এ সময়ই নায়ক রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে রাজশাহীতে আমার পরিচয় হয়।  তিনি আমার গান শুনে বলেন, আমি সিনেমায় গান গাইতে চাই কিনা।  তারপর তিনিই আমাকে ‘তালাক’ সিনেমায় প্লেব্যাক করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।  ছবিতে রাজ্জাক-ববিতা অভিনয় করেছিলেন।  সংগীত পরিচালনা করেন প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গানে আপনাকে আগের মতো দেখা যায় না কেন?

Rezeya-Pervin-4রিজিয়া পারভীন: প্লেব্যাক করছি, তবে মনের মতো না হলে এখন আর আমি গান করতে রাজি নই।  সেটা অ্যালবাম হোক আর প্লেব্যাকই হোক।  তাই গান করা কমিয়ে দিয়েছি।  অনেক প্রস্তাব থাকে চলচ্চিত্রে গান করার।  তবে ভালো মানের হলেই কেবল প্লেব্যাক করছি।

আনন্দ আলো: নতুন গান কী করছেন?

রিজিয়া পারভীন: নতুন গান করছি।  তবে আগের মতো নতুন গান নিয়ে আর উৎসাহ- উদ্দীপনা পাই না।  কারণ এখন সিডি কিনে কেউ গান শোনে না।  কোম্পানিও শিল্পীদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না।  সব মিলিয়ে একটা খারাপ অবস্হা চলছে সংগীতাঙ্গনে।  তবুও নতুন অ্যালবামের কাজ করছি।  অবশ্য সেগুলো কবে প্রকাশ করবো বলতে পারছি না।

আনন্দ আলো: এক সময় আপনি এবং পলাশ দুজনের মধ্যে একটা জুটি গড়ে উঠেছিল প্লেব্যাকে…

রিজিয়া পারভীন: ওই সময়টা ছিল আমার সংগীত জীবনের অনেক বড় একটি টার্নিং পয়েন্ট।  আমি সব সময় চাইতাম একটু নিচু লয়ের গান গাইতে।  কিন্তু কেন যেন অডিও ক্ষেত্রের মালিকেরা আমাকে উঁচু লয়ের গান গাইতে উৎসাহ দিতেন।  এ সময় আমি আর পলাশ মিলে প্রচুর হিন্দি গানের রিমেক গেয়েছি।  সেগুলো প্রচুর শ্রোতাপ্রিয়তাও পেয়েছিল।  আমার সংগীত জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই সময়টা।

আনন্দ আলো: এখন তো সংগীতের সেই সময়টা নেই।  এমন কেন হলো বলে আপনি মনে করেন?

রিজিয়া পারভীন: পাইরেসি মূল কারণ।  অডিও পাইরেসি এই শিল্পকে আজকের অধপতনের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।  আরেকটা বড় কারণ, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা।  আগে ক্যাসেট কিনে গান শুনতে হতো।  কেউ গান শুনতে চাইলে ক্যাসেট না কিনে কোনো উপায় ছিল না।  কিন্তু এখন কেউ চাইলেই ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে শুনতে পারে।  মোবাইলের মেমোরি কার্ডে হাজার হাজার গান রেখে শুনতে পারে।

আনন্দ আলো: এই অবস্হা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

রিজিয়া পারভীন: প্রথম কাজটা হলো পাইরেসি বন্ধ করতে হবে।  শ্র্রোতারা যেন সিডি কিনে গান শোনে সেজন্য তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।  ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে শুনলেও যেন সেখানে একটা ফি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে, সে ব্যবস্হা করতে হবে।  আর যে সব রেডিও টেলিভিশন গান বাজিয়ে শোনায় তাদের কাছ থেকেও রয়েলিটি নেওয়ার ব্যবস্হা করা যেতে পারে।  এ রকম অনেক ব্যবস্হাই চাইলে নেওয়া যেতে পারে।

আনন্দ আলো: এখন গান শুধু শোনার না, দেখারও বিষয়।  সে ক্ষেত্রে গানের কোয়ালিটির সঙ্গে গ্ল্যামার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

রিজিয়া পারভীন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তবে আমি অনেক সাজলাম সেটাই কিন্তু গ্ল্যামার নয়।  গানের কথা, পরিবেশ এ সবের সঙ্গে মিলিয়ে অভিব্যক্তি দেয়াটাও এক ধরনের গ্ল্যামার।  একটা জিনিস খুব সুন্দরভাবে শিলপীর দৃশ্যায়ন হলে মানুষের মনে গেঁথে যায়।  সুতরাং এই ডিজিটাল যুগে এসে গানের কোয়ালিটির সঙ্গে গ্ল্যামারও থাকতে হবে।

আনন্দ আলো: একজন স্টাইলিশ শিল্পী হিসেবে সঙ্গীতাঙ্গনে আপনার আলাদা একটা পরিচয় আছে…

রিজিয়া পারভীন: আমি ছোটবেলা থেকেই একটু পোশাক আশাকে অনেক বেশি সচেতন।  বিশেষ করে বাবার ছোট মেয়ে হিসেবে যখন যে আবদার করেছি, তাই পেয়েছি।  চলার ক্ষেত্রেও পেয়েছি অবাধ স্বাধীনতা।  সে কারণেই ওই জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।

আনন্দ আলো: নিজেকে কীভাবে দেখতে আপনার ভালো লাগে?

রিজিয়া পারভীন: আমার সব সময় সুন্দর পোশাক পরতে ভালো লাগে।  নিজে সুন্দর থাকতে পছন্দ করি।  গান এবং শপিং করা আমার একমাত্র নেশা।  নিজেকে একজন পরিপূর্ণ শিল্পী এবং ভালো মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখি।

আনন্দ আলো: আপনার জীবনে কোনো অপূর্ণতা আছে কী?

রিজিয়া পারভীন: আমি কখনোই অপূর্ণতা নিয়ে ভাবি না।  আমার পাওয়ার পাল্লাটা এত বেশি যে অপূর্ণতা নিয়ে ভাবলে আল্লাহ নারাজ হবে।

আনন্দ আলো: আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রি কোন দিকে যাচ্ছে?

Rezeya-Pervin-3রিজিয়া পারভীন: অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্হা এখন নড়বড়ে।  কারণ এখানে কোনো সমন্বয় নেই।  শিল্পী, সুরকার, গীতিকারদের মধ্যে একতার অভাব রয়েছে।  অডিও কোম্পানিগুলো শুধু ব্যবসা নিয়ে ভাবছে।  গান কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয় নিয়ে ভাবছে না।  তাছাড়া শিল্পীদের সম্মান ও সম্মানী কোনটাই ঠিকভাবে দিচ্ছেনা অডিও কোম্পানিগুলো।  এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।  সবাই এক না হলে এ অবস্হা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।  কারণ এ অবস্হা অনেক দিন থেকে চলছে।  এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।  এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন রয়েছে।

আনন্দ আলো: ক্যারিয়ারের ২৫ বছর পার করেছেন এমন কিছু কী আছে সেটা করতে না পারার কষ্ট আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়?

রিজিয়া পারভীন: আমি প্রচুর গান গেয়েছি।  কিন্তু আমার মনে দাগ কাটার মতো গান আমি এখনো গাইতে পারিনি।  এটা আমার একটা আক্ষেপ বলতে পারেন।

আনন্দ আলো: আপনি গান দিয়ে সবাইকে বিনোদিত করেন।  আপনার নিজের বিনোদন কী?

রিজিয়া পারভীন: আমি শপিং করতে পছন্দ করি।  এটা আমার একটা বিনোদন।  যখন আমার মন খারাপ থাকে তখন আমি একা একা গান গাই।

আনন্দ আলো: অবসর সময় কীভাবে কাটান?

রিজিয়া পারভীন: অবসর বলতে নেই।  গান নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়।  অবসর পেলে গান শুনি, প্রচুর ছবি দেখি আর রান্না-বান্না করি।

আনন্দ আলো: আপনার পরিবার সম্পর্কে কিছু বলুন?

রিজিয়া পারভীন: আমার মা-বাবা বেঁচে নেই।  আমরা চার বোন দুই ভাই।  দুই বোন মারা গেছে।  বর্তমানে আমরা দুই বোন দুই ভাই আছি।  আর আমার একমাত্র ছেলে প্রতীক।  এই হচ্ছে আমার পরিবার।  সংসার অনেক ভালো চলছে।  সংসার আর গান নিয়েই তো আমার জীবন।  এই দুটোকেই সমান সময় দেয়ার চেষ্টা করছি।