Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

অনেক প্রত্যাশার সাত ভাই চম্পা!

সুবর্ণা হক

ভদ্রলোক বহু বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অনেক চড়াই উৎরাই দেখেছেন। ধরতে গেলে এফডিসিতেই তার বসবাস। সিনেমার কাহিনীর প্রয়োজনে এফডিসির ফ্লোরে অনেকবার রাজপ্রাসাদ বানাতে দেখেছেন। কিন্তু কোনোটাই তার পছন্দ হয়নি। এবার এফডিসির ফ্লোরে একটি রাজপ্রাসাদ দেখে যারপর নাই উচ্ছ¡াসিত তিনি। যাকেই কাছে পান তাকেই কাছে টেনে নিয়ে বলেন, এফডিসির জীবনে সিনেমার জন্যও এতবড় সেট দেখি নাই। চ্যানেল আই-এর সাহস আছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও এফডিসিতে রাজবাড়ির এই বিশাল সেটটি দেখে যারপর নাই অভিভ‚ত। অবাক হয়ে বললেন- বাহ্, চমৎকার। রাজবাড়ি রাজবাড়ির মতোই হয়েছে। চমৎকার এই রাজবাড়িটির খবর ইতোমধ্যে দেশ থেকে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। অনেকেই শুধু রাজবাড়িটি দেখার জন্য এফডিসিতে আসছেন। টিভি নাটকের অঙ্গনে রাজবাড়িটিকে ঘিরে রীতিমত জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

কেন এই রাজবাড়ি? কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই রাজবাড়িতে আসলে কি হবে? উত্তরটাও ইতোমধ্যে সকলে জেনে ফেলেছেন। বহুল আলোচিত এই রাজবাড়িতে চ্যানেল আই-এর একটি নতুন ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে। নাটকের নাম ‘সাত ভাই চম্পা’।

দেশের মানুষের কাছে ‘সাত ভাই চম্পা’ অনেক পরিচিত একটি সিনেমার নাম। সিনেমার পর্দায় ‘সাত ভাই চম্পা’ ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। ৬০’এর দশকে ছবিটি যখন মুক্তি পায় তখন সারাদেশে সিনেমা প্রেমী মানুষের মাঝে এক ধরনের হৈচৈ পড়ে যায়। বহু বছর পর টিভি চ্যানেলের জন্য নির্মিত হচ্ছে ব্যয় বহুল টিভি ধারাবাহিক ‘সাত ভাই চম্পা’। সে জন্যই এফডিসিতে কোটি টাকার সেট বানানো হয়েছে। প্রযুক্তির সকল সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন ‘সাত ভাই চম্পা’র শুটিং হচ্ছে। অভিনেতা-অভিনেত্রীর বাইরে শতাধিক কর্মী নাটকটির নানা কাজে প্রতিদিন গুরু দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক ক্যামেরায় প্রতিদিন শুটিং হচ্ছে। অন লাইন এডিটিং সুবিধাও রাখা হয়েছে শুটিংস্পটে।

Shath-BHai-Champa-1সাত ভাই চম্পায় নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে কয়েকশ শিল্পী অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অভিনয়ের জন্য তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সরবরাহ করা হয় শুটিংস্পটে। এজন্য একটি নির্ধারিত বিভাগে একদল অভিজ্ঞ তরুণ-তরুণী গুরু দায়িত্ব পালন করছে। প্রপস-এর জন্যও রয়েছে আলাদা বিভাগ। এফডিসিতে শুটিংস্পটে ঢোকার পর শিল্পী ও কলাকুশলীরা একটা নিয়মের মধ্যে নিজেদেরকে সহজেই যুক্ত করছেন। ‘আমার এটা লাগবে’ ওটা লাগবে একথা মুখ ফুটে বলতে হচ্ছে না। ঘড়ি ধরে একটা নিয়মের মধ্যেই যাব যেটা দরকার পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে শিল্পীরা অধিক মনোযোগী হয়ে উঠেছেন নাটকটির ব্যাপারে।

কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজসহ গণ্যমান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে ‘সাত ভাই চম্পা’ দীর্ঘ ধারাবাহিকের শুটিং পর্বের শুভ উদ্বোধন করা হয়। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু চ্যানেল আই-এর এই সাহসী উদ্যোগের ভ‚য়সী প্রশংসা করেন। তিনি রাজবাড়ি সদৃশ্য বিশাল সেটটি অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে দেখেন। রাজ দরবারে রাজার চেয়ারে বসে ছবিও তোলেন।

কি হতে যাচ্ছে ‘সাত ভাই চম্পা’ ধারাবাহিককে ঘিরে? উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি ধারণাপত্র দেয়া হয়েছে। ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে-

Shath-BHai-Champa-2“সেই লোডশেডিং-এর রাতের সময়কার কথা। সুযোগ পেলেই তখন দাদী-নানীদের কোলে ঝাপিয়ে পড়াই ছিল এক মহা আনন্দ ঘটিকা। গল্পের আসরে জমে উঠার এক অন্যরকম উন্মাদনা ছিল তা। পঙ্খীরাজ ঘোড়া ছুটিয়ে উঠোনে নেমে আসা রাজকুমার, সোনার কাঠি রুপোর কাঠি দিয়ে ঘুমন্ত রাজকুমারীকে মুক্ত করে নিয়ে যাওয়া রাক্ষসের ডেরা থেকে। ব্যঙ্গম-ব্যঙ্গমী, ব্যাঙ রাজকুমার, রাজা-রাণী, সুয়োরাণী, দুয়োরাণী, রাক্ষক খোক্ষস আর সেই বোকা কৃষকের গল্প কে না শুনেছে। বাড়ির বড়দের হাত ধরে চরিত্রগুলোর সঙ্গে সেই কবে থেকে আমাদের পরিচয়। হ্যাঁ, আমাদের রূপকথা, আমাদের গল্প নিয়েই তৈরি হতে যাচ্ছে টেলিভিশন সিরিজ ‘সাত ভাই চম্পা’। যেখানে ঠাঁই পাবে আমাদের বাংলার চিরচেনা রূপকথা। প্রাচীন বঙ্গের পৌরনিক রূপকথার ছোঁয়া সবাইকে ফিরিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ।

মূলত ‘সাত ভাই চম্পা’র মূল গল্পের আদলেই এই টিভি সিরিজ নির্মাণ হলেও এর মাঝে থাকবে বিভিন্ন মৌলিক গল্পের সম্ভার। পরিচালক রিপন নাগ ও তার বিশেষ স্ক্রিপ্ট টিম দীর্ঘদিনের রিসার্চ ও পড়াশোনার পরেই গল্পের চিত্রনাট্যের রূপ দিয়েছে। যখন দেশের প্রতিটি টিভি চ্যানেলে বিদেশি সিরিজের আনাগোনা বেড়েই চলছিল, যখন টিভি চ্যানেল থেকে দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ঠিক তখনই দেশীয় সংস্কৃতি ও আমাদের মৌলিক গল্প নিয়ে স্বপ্ন দেখে রিপন নাগ ও তার দল। বাংলাদেশকে মানসম্মত বিনোদন দেয়াই ছিল যাদের মূল চিন্তা চেতনায় তারাই এর উদ্যোক্তা হয়ে হাজির হয়েছিল চ্যানেল আই-এর প্রান্তে। সংগীত পরিচালক আজম বাবুর হাত ধরে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও পরিচালক, বিক্রয় ও বিপণন ইবনে হাসান খানের যৌথ প্রয়াসে একই স্বপ্নের আদলে আবদ্ধ হয়ে নতুন ও আরো সুসংগঠিত একটি দল, ‘সাত ভাই চম্পা’র দল। শুরু হয় কার্যক্রম। প্রথমে এই স্বপ্নটি দুঃসাহসি মনে হলেও দিন শেষে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটকে ঘিরে যদি বিবেচনা করা হয় তবে এর এক বিশাল ঘাটতি অনুভব করা যাচ্ছিল বিনোদন জগতে। বিশ্ব যখন প্রযুক্তির চ‚ড়ান্ত সীমারেখায় দাঁড়িয়ে তখন কম বাজেটে দর্শকদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলার দিনগুলো যে শেষ তা অনেক আগেই নির্ধারণ করে ফেলেছিল এখনকার দিনের ইন্টারনেট জনতারা। তাই বিশ্বায়নের এই যুগে, সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেই নির্মাণ হয়েছে ‘সাত ভাই চম্পা’র সেট, এর পোশাক, এর মেকআপ, এর ক্যামেরা এবং এর ভিএফএক্স থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছুই। গোটা ‘সাত ভাই চম্পা’ দলের প্রতিটি বিভাগেই প্রযুক্তির শীর্ষ ছোঁয়াই দেখতে পাওয়া যাবে। যা মানসম্মত বিনোদন দেয়ায় থাকবে সর্বক্ষণ প্রস্তুত। শুধু প্রযুক্তির ছোঁয়া বললেও একটু ভুল হবে, যারা এই দলের সমস্যা তাদের প্রত্যেকেই তাদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের পথে নিজেকে এক প্রকার যুগোপযোগী করে তুলেছিল এই প্রোজেক্টেরই জন্য। তাই দিন শেষ প্রযোজক থেকে শুরু করে নির্মাতার দল, সবার মিলিত কষ্টের যোগফলকে ঘিরেই সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এই টিভি সিরিজ।

সাত ভাই চম্পা আমাদের বাংলার গল্প, একে ঘিরে নির্মাণ হয়েছে নানা সিনেমা যা পরবর্তীতে দুই বাংলায় ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। এই গল্প আমাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। তাই সূ²ভাবে গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে দীর্ঘ ছয় মাসের বাছাই পর্বের পরেই চূড়ান্ত করা হয়। এই সিরজে প্রবীণ থেকে শুরু করে নবীন অভিনয় শিল্পীদের উপস্থিতি দেখা মিলবে দর্শকদের। চরিত্রের চাহিদা অনুযায়ী শিল্পী নির্বাচন করা প্রয়োজন। এতে নতুন ও পুরানের সংমিশ্রণ দর্শকদের সম্পূর্ণভাবে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ চরিত্রকে দর্শকদের কাছে সহজেই বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হলে এই সূত্রের প্রয়োগ আবশ্যক।

দীর্ঘদিনের এই পরিকল্পনা ও আজ তার বাস্তবায়নে আপনাদের সবার শুভ কামনা প্রত্যাশা করছে আমাদের পুরো দল। সম্পূর্ণ বাংলাদেশের গল্প ও বাংলাদেশের কলাকুশলী নিয়ে নির্মিত এই টিভি সিরিজের যাত্রা হোক শুভ, হোক এই মাটির জন্য এক নতুন সূচনা। এই আশা আমাদের, গোটা দেশের। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ যাবে এগিয়ে এই আমাদের চাওয়া।”

আমরা আশাবাদী আমরা সেটা পারব

-রিপন নাগ, পরিচালক

‘সাত ভাই চম্পা’ দীর্ঘ ধারাবাহিকটির পরিচালক হিসেবে গুরু দায়িত্ব পালন করছেন রিপন নাগ। কথা কম বলেন। কাজটাই তার কাছে আসল। খুব যতœ নিয়ে ‘সাত ভাই চম্পার’ শুটিং পরিচালনা করছেন। নাটকটির ব্যাপারে তিনি দারুণ আশাবাদী। দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইদানিং বিদেশি টিভি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা একটা পরিবর্তন চাই। প্রত্যাশা ‘সাত ভাই চম্পা’ শুধু দেশে নয়, ভবিষ্যতে বিদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও একাধিক ভাষায় ডাবিং করে প্রচার হবে। আমরা আশাবাদী। আমরা সেটা পারব।